বীরভূমের অঙ্গনওয়ারি কর্মী নিয়োগ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরমহলে বিতর্ক
বীরভূম জেলার দুবরাজপুরে অঙ্গনওয়ারি কর্মী নিয়োগের তালিকায় স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী মুনমুন ঘোষের নাম উঠে আসায় রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
আজ এখন ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার, ২রা সেপ্টেম্বর: বীরভূম জেলার দুবরাজপুরে অঙ্গনওয়ারি কর্মী নিয়োগের তালিকায় স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী মুনমুন ঘোষের নাম উঠে আসায় রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। মুনমুন ঘোষ, যিনি বর্তমানে বীরভূম জেলা পরিষদের একজন সক্রিয় তৃণমূল সদস্যা, একই সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের ক্লারিক্যাল পদে কর্মরত ছিলেন, তাকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেখে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী এবং বিরোধীরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনাটি বিশেষ করে দলের অন্দরে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
মুনমুন ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি ২০১৮ সালে অঙ্গনওয়ারি কর্মী পদে আবেদন করেন এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারভিউর মাধ্যমে এই পদে নিয়োগ পান। তিনি তার এই নিয়োগকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিয়ম মেনে হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনওরকম রাজনৈতিক প্রভাবের ভূমিকা ছিল না। তিনি বলেন, “আমি যখন অঙ্গনওয়ারি কর্মী পদের জন্য আবেদন করেছিলাম, তখন কোনও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছিলাম না। পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউর মাধ্যমে আমি এই পদে সফল হয়েছি।”
মুনমুন ঘোষ আরও জানিয়েছেন যে তিনি ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক ক্লারিক্যাল পদের দায়িত্ব পালন করছেন, তবে অঙ্গনওয়ারি কর্মী হিসেবে যোগদান করলে সেই কাজ থেকে সরে আসবেন। "আমি দলের কাজ, বাড়ির কাজ এবং অঙ্গনওয়ারি কাজ মিলিয়ে পরিচালনা করব," তিনি মন্তব্য করেন।
বিরোধী দল বিজেপি এই নিয়োগকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, এটি স্পষ্টতই "স্বজনপোষণের রাজনীতি"। তাদের মতে, একজন সক্রিয় তৃণমূল নেত্রীকে অঙ্গনওয়ারি কর্মীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার এবং অনৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার উদাহরণ। বিজেপি আরও দাবি করেছে, এই ঘটনার পিছনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তারা এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত দাবি করবে বলে জানিয়েছে।
যদিও এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে, তবে মুনমুন ঘোষের সমর্থনে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তার সমর্থকদের মতে, মুনমুন ঘোষের রাজনৈতিক অবস্থানকে তার পেশাগত যোগ্যতার সঙ্গে মেলানো উচিত নয়। তারা বলছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা করে আসছেন এবং অঙ্গনওয়ারি কর্মী হিসেবে তার কাজ নিঃসন্দেহে এলাকার জন্য উপকার বয়ে আনবে।
দুবরাজপুরের স্থানীয় জনগণ মুনমুন ঘোষের নিয়োগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিছু মানুষ মনে করছেন যে এই পদে তার নিয়োগ স্বাভাবিক এবং তিনি এই পদের যোগ্য। তবে অনেকে মনে করছেন, একজন তৃণমূল নেত্রীকে এই ধরনের পদে নিয়োগ দেওয়ায় অন্য যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি অবিচার হতে পারে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "মুনমুন ঘোষ আমাদের এলাকায় একজন পরিচিত মুখ এবং তার কাজের দক্ষতা আমরা সবাই জানি। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিক ব্যক্তির নিয়োগ কিছুটা অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হচ্ছে।"
দুবরাজপুরে মুনমুন ঘোষের নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে, তা দ্রুত মীমাংসিত হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও মুনমুন ঘোষ নিজে তার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে স্বচ্ছতার দাবি করেছেন, তবে দলের অন্দর এবং বিরোধী মহলের সমালোচনা এবং দাবিগুলি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।এই ঘটনাটি শুধুমাত্র মুনমুন ঘোষের ব্যক্তিগত নিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলের রাজনীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।