নুন চিনির জলেই বিপদ! পরামর্শ চিকিৎসকদের
আর যা-ই করুন, গরমে এই কাজ ভুলেও করবেন না! সতর্কতা বিশেষজ্ঞের!। তবে, নুন-চিনির জল বহুদিন ধরে চলে আসা ঘরোয়া পদ্ধতি। গ্রীষ্মকালে বাইরে থেকে এলে বা পেটের গোলমাল হলে নুন-চিনির জল পান করাই রীতি। কিন্তু এবার এ বিষয়েই সতর্ক করে দিলেন চিকিৎসকরা।
নুন চিনির জলেই বিপদ! পরামর্শ চিকিৎসকদের
চিরশ্রী দাস: যেমন কাঠ ফাটা রোদ্দুর, তেমনই পাল্লা দিয়ে প্যাচপেচে ঘাম। অত্যধিক গরমের কারণে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। এই দুই খনিজ দেহ থেকে বেরিয়ে গেলে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এই কারণেই গরমে মাঝে বাড়ছে হিট স্ট্রোক এবং হিট এক্সহউশনের মতো সমস্যা। একদিকে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা অন্য দিকে হঠাৎ হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি। সবমিলিয়ে আবহাওয়ারর মতি গতি বোঝা দায়, তাই এখন ঘরে ঘরে সংক্রমণজনিত অসুখও বাড়ছে। মরসুম বদলের এই সময় এক দিকে যেমন জ্বর, আন্ত্রিক ভোগাচ্ছে, তেমনই শরীরে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যাতেও ভুগছেন অনেকে। আর সেই সুবাদে শরীরকে গ্রাস করছে ক্লান্তি। এই অবস্থায় একমাত্র শান্তি জল আর নানা ধরণের বিকল্প পানীয়তে। তাই এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের মধ্যে অনেকেই গ্রীষ্মের শুরুর দিন থেকে নুন-জল খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। তাতেই ফিরছে শরীরের হাল। এমনকী দূর হয়ে যাচ্ছে ক্লান্তি। কিন্তু অজান্তেই নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো ?
চিকিৎসকদের মতে, ডায়ারিয়া বা ডিহাইড্রেশন হলে শুধুমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওআরএসই খাওয়া উচিত। বাড়িতে তৈরি নুন বা চিনির জল, অথবা চিনি দিয়ে সিরাপ বানিয়ে খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। পেটের রোগ এড়াতে নুন-চিনির জলের পরিবর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ওআরএস সেবনেরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে ডায়েরিয়া, আন্ত্রিকের মতো রোগ হলে বা শরীরে জলের মাত্রা কমে গেলে নুন-চিনির জল পান করলে আরও ক্ষতি হতে পারে বলেই সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, নুন-চিনির জল পান করার পরিবর্তে ওআরএস পান করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ওআরএস সেবন করলে কোনও শারীরিক সমস্যা হবে না।
ওআরএস-এর পুরো কথা ‘ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন’। আন্ত্রিকের সমস্যায় শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় লবন ও শর্করা বেরিয়ে যেতে থাকে। তখন শরীরে প্রয়োজনীয় জল ও খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সারা পৃথিবীতেই রোগীকে ওআরএস খাওয়ানোর প্রচলন রয়েছে। কিন্তু হাতের কাছে ওআরএসের প্যাকেট না পেলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওআরএস বানিয়ে নেন অনেকে। কী ভাবে বাড়িতে ওআরএস বানানো যায়, তার কিছু পদ্ধতিও সমাজমাধ্যমে পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসক পঙ্কজ গর্গ দাবি করেছেন, বাড়িতে তৈরি ওআরএস শরীরের জন্য ঠিক নয়। কারণ নুন বা চিনি কী অনুপাতে মেশানো হচ্ছে সেটাই আসল। এই অনুপাতের কমবেশি হলে তখন তা আর স্বাস্থ্যসম্মত থাকে না। চিকিৎসকের ব্যাখ্যা, এক লিটার জল দিয়ে ওআরএস বানাতে গেলে কতটা নুন ও কতটা চিনি লাগবে সেই পরিমাপটা বাড়িতে তৈরি করলে ঠিক থাকে না। ফলে হয় নুনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, নয়তো চিনি। দেখা গিয়েছে, নুন-চিনির জলের স্বাদ বাড়াতে অনেকেই বেশি পরিমাণে চিনি ব্যবহার করেছেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বেশি নুন বা অধিক চিনি শরীরে গিয়ে বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে।
এখন ঘরে ঘরে ভাইরাল জ্বর হচ্ছে। সেই সঙ্গে বমি, পেটের গোলমালও হচ্ছে। এমন হলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে ওআরএস খাওয়াতে হবে। কিন্তু সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওআরএসই খাওয়ানো উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের পরামর্শ, ওআরএসে শুধু নুন, চিনি থাকে না। আরও অনেক উপাদান মেশানো যাকে যা শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যও ধরে রাখে। তাই বাজার থেকে ওআরএস কিনলেও তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে কি না সেটা দেখে কেনারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।