আন্দোলনের অভিমুখ পরিবর্তন : সুরমান আলি মণ্ডল
আন্দোলনের অভিমুখ পরিবর্তন
সুরমান আলি মণ্ডল (সম্পাদক, আজ এখন):
‘আজ এখন’ সম্পাদকের প্রতিবেদনের জেরে ধর্ষণ রুখতে কড়া আইন আনতে চলেছে মমতা প্রশাসন। আমি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি ।
কাল আমি যা লিখেছি আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে এসে একই কথা বললেন দলের সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সেনাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি প্রথম থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছি। এটা আমিই প্রথম লিখেছি যে আন্দোলনের নামে সিংহাসন দখলের লড়াই চলছে। এতে ক্ষতি হচেছ বাংলার গরিব আপামর মানুষদের। তাঁরা চিকিৎসা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। প্রাণভয়ে রোজ আনি, রোজ খাই-মানুষেরা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। ধারাবাহিক সংঘর্ষের বাতাবরণে রাজ্যবাসী প্রবল আতঙ্কিত। মঙ্গলবার ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের মতো নাশকতা কৃতিত্বের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ রুখে দিতে পেরেছে। এজন্য আমি পুলিশ প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
আন্দোলনের গতিপথ পাল্টে গেছে ধর্ষকদের কি আড়াল করতে? জুনিয়র চিকিৎসকদের এখনও পরিষেবা থেকে বিরত থাকা অর্থহীন। এই কথাটাও আমি বার বার বলে আসছি। বিশ্বাস করি, আন্দোলন তার গতি পথ হারিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কায়েমি স্বার্থে ব্যবহৃত হচেছ। কোনও সভ্য সমাজ কখনওই এই ধর্ষণ ও খুন মেনে নিতে পারে না। আর পারে না বলেই বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে।
মিটিং, মিছিল কিছুই বুঝি না। শুধু বুঝি তিলোত্তমার ন্যায়বিচার। যা ঠিকমতো এগোচেছ কি? যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি চাই ধর্ষকদের যত তাড়তাড়ি সম্ভব কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক। যা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এখন প্রতিবাদের নামে প্রহসন চলছে। তিলোত্তমার বিচারের জন্য উত্তাল আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তার প্রমাণ মঙ্গলবারের ছাত্র সমাজের নবান্ন ঘেরাও মিছিল। যেটা কিনা অরাজনৈতিক মিছিল, যেখানে হাঁটলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং, কৌস্তভ বাগচী সহ আরও অনেকে।
এখানে হাজার দেড়েক ছাত্র ছিল। বাকীরা ছিল বহিরাগত। মঙ্গলে গ্রেফতার হল ছাত্র সমাজের আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন। তাদের ছাড়াতে হঠাৎ রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন এত তৎপরতা দেখালেন। আর এজন্য ছাত্র সমাজের পরিবর্তে বিজেপি কেনই বা বুধবার বারো ঘন্টা বনধ ডেকে বাংলা অচল করার চেষ্টা করল? আসলে কি তৃণমূলের ছাত্রপরিষদের জমায়েত আটকাতে? এর থেকে ছাত্র সমাজের রাশ আসলে কার হাতে ছিল তা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। আসলে বাংলায় নীচু তলার বিজেপি কর্মীরা দলের থেকে তেমন সম্মান পান না। এখানে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সংগঠিত না করলে কোনও দিন ভোট ময়দানে বিজেপি চূড়ান্ত সফল হতে পারবে না। আর অভিযোগ, বিজেপির দলেও প্রচুর দুর্নীতি চলছে। তাছাড়া দিনের পর দিন বাংলা অচল করলে বিজেপি বাংলা কখনও দখল করতে পারবে না। বরং সাধারণ মানুষ থেকে তারা আরও দূরে সরে যাবে। এই বিষয়টা বিজেপির নেতৃত্বের অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত। আসলে এখন আন্দোলনের উপলক্ষ্য তিলোত্তমা, লক্ষ্য মমতার পদত্যাগ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী (সিবিআই) আরজিকরের জুনিয়র মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্ত করছে।
এই যে পর পর দুদিন বাংলা অচল করা হল এতে সাধারণ মানুষদের কি লাভ হল? অথবা তিলোত্তমার পরিবারের কোনও ফায়দা হল কি? তদন্ত এগল? নির্যাতিতার ন্যায়বিচার? তাছাড়া এই তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের । চূড়ান্ত রায় দেবে দেশের শীর্ষ আদালত। তাহলে এখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কি? কেন বার বার মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাওয়া হচেছ? তদন্তের মূল দিশা এখনও স্পষ্ট নয়। তার কারণ কেন বার বার আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পুরানো কিছু অনিয়মের অভিযোগকে সামনে আনা হচেছ। এইভাবে কি ধর্ষণ ও খুুনের মূল মামলা থেকে চোখ সরিয়ে দেওয়া হচেছ না? যেমন হয়েছিল বগটুই মামলায়। নৃশংসভাবে পুড়িয়ে খুন করার পর সিবিআই তদন্ত করেছিল। অথচ এই মামলায় বিজেপি নেতা মিহি লাল সঠিক সাক্ষ্য দিলেন না। ফলে ঠাণ্ডাঘরে চলে গেল যাবতীয় বিচার। তিলোত্তমারও কি এই এক হাল হবে? ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি তিলোত্তমার যেন উপযুক্ত ন্যায় বিচার হয়। শুধু বাংলার তিলোত্তমা নয়, দেশজুড়ে সব নির্যাতিতারাই যেন সঠিক বিচার পান।
আরজিকর কাণ্ডে জটিলতা বাড়ছে। ধরা হয়েছে সঞ্জয়কে। সে এই খুন ও ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে নিয়েছে। পরে অবশ্য দাবি করেছে সে আদৌ খুন করেনি। তবে খুনি কে? বা কারা? কেন খুন হল? এই খুনে কতজন জড়িত ছিল? আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কি এই খুনের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন? তিনি কি এরসঙ্গে জড়িত? এমন হাজারো প্রশ্ন উঠছে। যার কোনওটারই এখনও পর্যন্ত উত্তর দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। উল্টে বহু লোককে দিয়ে সন্দীপ ঘোষের পুরানো অনিয়ম তোলা হচেছ। এটা কি মূল তদন্তকে ঘেঁটে দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে করানো হচেছ? এরও তদন্ত হওয়া দরকার। কেউ কি চাইছে এই মামলার পরিণতিও বগটুই হোক।