পুজোর একাল সেকাল

ভরা নদী টলোমলো - এই সময় যেন শত দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যেও পরিপূর্ণতা খুঁজে পাওয়া, কারণ মা আসছেন আমাদের মাঝখানে। যদি গ্রামের কথাই ধরি, অনেক গ্রামেই বারোয়ারি পুজো ছাড়াও বহু পুরোনো বনেদি বাড়িতেও আচার মেনে পুজো হয়ে থাকে। গ্রামের শস্য-সবুজ খেত, মেঠো পথ, পুকুর-ভর্তি জল, মাঠের ওপারে আকাশটা যেন মাটিতে মিশে গেছে। মায়ের আগমনের এই মনোমুগ্ধকর অপরূপ শোভা আর কোথায় পাব? শহর এবং গ্রামের পুজো একই রকম হলেও একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়!

পুজোর একাল সেকাল

সুরমান আলি মণ্ডল: পুজো প্রায় এসেই গেছে। চারিদিকে সাজো সাজো রব। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে সেজে উঠেছে অপরূপ রূপে, অনন্য বৈভবে। এই সময় যেন সব পেয়েছির সময়, সবকিছুই জয় করার সময়। আকাশে পেঁজা মেঘের লুকোচুরি খেলা, মন জুড়োনো কাশফুলের এলোমেলো  ওড়াউড়ি, বাগানে সহস্র ফুলের হাসি। পাখির কুজন। ভরা নদী টলোমলো - এই সময় যেন শত দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যেও পরিপূর্ণতা খুঁজে পাওয়া, কারণ মা আসছেন আমাদের মাঝখানে। 


যদি গ্রামের কথাই ধরি, অনেক গ্রামেই বারোয়ারি পুজো ছাড়াও বহু পুরোনো বনেদি বাড়িতেও আচার মেনে পুজো হয়ে থাকে। গ্রামের শস্য-সবুজ খেত, মেঠো পথ, পুকুর-ভর্তি জল, মাঠের ওপারে আকাশটা যেন মাটিতে মিশে গেছে। মায়ের আগমনের এই মনোমুগ্ধকর অপরূপ শোভা আর কোথায় পাব? শহর এবং গ্রামের পুজো একই রকম হলেও  একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়!  শহর-কেন্দ্রিক পুজোগুলো জাঁকজমকপূর্ণ, একটু বেশিই আধুনিক। ভিড়ে ভিড়াক্কার। কিন্তু গ্রামের পুজো দেখার মধ্যে একটা আন্তরিকতা, একটু বেশিই ভক্তিভাব প্রকাশ পায়। শহরই বলি আর গ্রামই বলি, জগজ্জননী মা তো সবার জন্যেই, সকল সম্প্রদায়ের জন্যেই। তিনি যেভাবেই আসুন, আমরা গ্রহণ করব পরম ভক্তি ভরে। 


বহু প্রাচীন কাল থেকেই দুর্গা মায়ের আরাধনা করার প্রচলন হয়ে আসছে। রাজা, বাদশা থেকে শুরু করে সেই সময় অনেক বর্ধিষ্ণু বাড়িতে মহা আড়ম্বরে, ভক্তিপূর্ণ চিত্তে পুজো করা হত। দিন যত এগিয়েছে, পুজোর বৈচিত্র্য, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতির অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে।
পুজোয় প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে মনটা ভাল হয়ে যায়, তাছাড়া, এই কটা দিন খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার মজাটাই আলাদা। আমার ঠাকুর দেখার মধ্যে আনন্দ না হলেও মন্ত্রোচ্চারণে, ঢাকের আওয়াজের মধ্যেই আমি গভীর আনন্দ খুঁজে পাই, স্মৃতির পাতা উল্টে দেখি। ভাল লাগে, বেশ ভাল। তবু শত আনন্দের মধ্যেও কোথায় যেন একটা অপরিপূর্ণতা লুকিয়ে রয়েছে। এই যে পুজো, সেই পুজো তো সবার জন্যেই, কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষ প্রতি বছর এই 'সব পেয়েছির উৎসব' থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। কেন? বছর বছর বন্যা, মহামারি, নিত্যদিনের অভাব-অনটন এদের মেরে রেখেছে। এদের কোনও আনন্দ নেই, উৎসব নেই। ঢাকের বাজনা কানে যায়, ওই পর্যন্তই। বাঘের থাবার মত অন্ধকার এদের চারি দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। কোনও দিক থেকেই কোনও সাহায্য এদের কাছে আলো জ্বালতে আসে না। নিরন্ন,  সব-শূন্য মানুষগুলোকে তুমি দেখো মা! রাজ্যে এখন শিল্প-খরা, চারদিকে নৈরাজ্য,  দুর্নীতি, হিংস্র পশুর দল লুটেপুটে খাচ্ছে। প্রকৃত কোনও উন্নয়ন চোখে পড়ছে না, শুধু মিথ্যে প্রতিশ্রুতি! ধর্ষণ বেড়েই চলেছে রাজ্যে। বেকার সমস্যা, যৌন তাড়না, ছলচাতুরি নিরন্তর বেড়েই চলেছে। জানি না বাংলায় এই নৈরাজ্য কবে শেষ হবে। কবে ভোর হয়ে নতুন দিনের সূর্যোদয় হবে!


মাগো, সত্যিই তুমি যদি আমাদের মঙ্গল চাও তুমি অন্য রূপে এসো, হাতে নিয়ে জয়। পরাজয় আর হিংসা আর যেন  দেখতে না হয়। মাগো, তুমি সকল অন্ধকার মুছে ফেলে আলোকিত বৈভবে এসো এই ধরাধামে। তোমার আলোয় আলোকিত কর সব কিছু। মুছে যাক যত অনাচার। মাগো, আমাদের বাঁচাও, আমাদের জাগাও। আমরা যেন তোমার স্পর্শে হিংস্রতা ভুলে গিয়ে সভ্যতার জয়গান গাইতে পারি। অন্ধকারে আলো জ্বালো মা, আলো জ্বালো।