হিরের দামে গরু
৬০ লক্ষ টাকায় আরও একটি গরু বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর সাদিক অ্যাগ্রো থেকে তিনটি গরু ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় কিনেছেন ঢাকার এক ক্রেতা।
ঢাকা: গরুকে নিয়ে গল্প অনেক। কখনও গরুর এক ঘেয়েমি রচনা, কখনও গরুকে তুলেই গালিগালাজ করা। গরুকে নিয়ে আবার তর্ক-বিতর্কও কম নয়। আর এখন সেই গরুরই কিনা আকাশ ছোঁওয়া দাম?
ভাবছেন হয়তো সর্বচ্চ দাম হবে ৫ লক্ষ কিংবা ২০ লক্ষ? না, লাক্ষ ছাড়িয়েও গরুর দাম ছুঁয়েছে কোটিতে। বাংলাদেশে কোরবানির বাজারে ২ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে দু’টি গরু। ৬০ লক্ষ টাকায় আরও একটি গরু বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর সাদিক অ্যাগ্রো থেকে তিনটি গরু ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় কিনেছেন ঢাকার এক ক্রেতা।
মাস দু’য়েক আগে ঢাকায় প্রাণীসম্পদ মেলায় কোটি টাকার একটি গরু এনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল সাদিক অ্যাগ্রো। ‘বংশ মর্যাদাপূর্ণ’ কোটি টাকার এই গরু নিয়ে আলোচনা উঠেছিল তুঙ্গে। এরইমধ্যে সাদিক অ্যাগ্রো কোরবানির বাজারে এক কোটি টাকার আরও একটি গরু তুললেও তা প্রচারে ছিল না। অবশেষে গত সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহামা জাতের তিনটি গরুই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এক কোটি টাকায় বিক্রি হওয়া বিশেষ গরুটি এখনও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে দামি গরু।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন দামকে শুধু মূল্য হিসাবে দেখলে ভুল হবে। এখানে গরুর জিনগত উপাদান লুকিয়ে আছে। অভাবনীয় দামের পিছনে জাতটির নানা উন্নত গুণও আছে। জানা যাচ্ছে, এক কোটি টাকার গরুটির ওজন ১৪০০ কেজি। এই গরুটির ১১০ বছরের পেডিগ্রি (বংশ পরম্পরা লিপিবদ্ধ) আছে, সঙ্গে এই গরুটির বাবা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্লাডলাইন। এটা হচ্ছে আমেরিকান ভিএইট নোবেল বেস্ট সিরিজের গরু। এই জাতের গরু সব থেকে কম কোলেস্টেরল যুক্ত মাংস উৎপাদনকারী। এই গরুর মাংস খেলে কোলেস্টেরল কম হবে। বাজারের মাংসের বিচারে এটি খুবই উন্নত মানের। ৫ কেজি দানাদার খেয়ে এই গরু এক কেজি মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম।
অথচ দেশীয় জাতের গরু ১২-১৭ কেজি দানাদার খাবার খেয়ে এক কেজি মাংস উৎপাদন করে। তাছাড়া কম খাদ্য খেয়ে দ্রুত বড় হতে পারে। তাই সব মিলিয়ে এই গরুর দাম আকাশ ছোঁয়া। জানা যাচ্ছে, গরুটির গায়ে থাকা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ দিলে তার ১১০ বছরের ইতিহাস চলে আসবে। নতুন গরুটি দেড় কোটি টাকা চাওয়া হলেও বিক্রি হয়েছে এক কোটি টাকায়। গরুটির হাঁটা চলা কিংবা দাঁড়ানোর উপরও আমেরিকায় দাম নির্ভর করে। বর্তমানে প্রাণীসম্পদ অধিদফতর দেশীয় জাতের গরু কৃত্রিম প্রজননের জন্য ৪ ধরনের সিমেন প্রস্তুত করে।
আরসিসি বা নর্থ বেঙ্গল গ্রে বা শাহীওয়াল বা মুন্সীগঞ্জ- এসব জাতের গরু থেকে দুধ উৎপাদন করা সম্ভব নয়, শুধু মাংস উৎপাদন করা যায়। এ জাতের একটি ২ বছরের গরু থেকে ১২০-১৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। অপরদিকে, দেশীয় গরুর সঙ্গে এসব জাত সংকরায়ণ না করে যদি ব্রাহমার মতো উন্নত জাতের সংকরায়ণ করা হয়, তাহলে ২ বছরের একটা গরু থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৫০-৩০০ কেজি মাংস পাওয়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, গরুর পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রো এবার ১৮০ কেজি ওজনের একটি ছাগল বিক্রি করেছে ১৫ লক্ষ টাকায়। সাদিক অ্যাগ্রোর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামারে থাকা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার ছাগলটিকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের ছাগল আছে। শুধু ছাগল নয়, গরু, মহিষ, দুম্বা, উট, ভেড়া, গাড়ল, গয়াল, পাঙ্গানুর গরুসহ সাড়ে ৩ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।