ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব পাস, নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সহযোগিতা
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪টি। রাশিয়া ভোট দানে বিরত ছিল। হামাস যুদ্ধ বিরতিকে স্বাগত জানালেও, প্রথম থেকেই বলে এসেছে, তারা এমনভাবে যুদ্ধ বিরতি চায় যেখানে যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়ে গেল গাজার যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব। নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় উদ্যোগ। কিন্তু এই প্রস্তাব কি আদৌ মেনে নেবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়। গত সোমবার এই প্রস্তাবটির উপর ভোটাভুটি হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪টি। রাশিয়া ভোট দানে বিরত ছিল। হামাস যুদ্ধ বিরতিকে স্বাগত জানালেও, প্রথম থেকেই বলে এসেছে, তারা এমনভাবে যুদ্ধ বিরতি চায় যেখানে যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে পারে। শুধু তাই নয়, গাজা থেকে ইসরায়েলি সমস্ত সেনাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। অপরদিকে ইসরায়েল বারংবার বলে এসেছে, তারা হামাস নির্মূল না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না। হামাসকে সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি এও জানিয়েছেন, গাজা নিয়ে এমন কোন অর্থহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি আলোচনায় তারা জড়াবে না, যেটি হামাস নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে।
বাইডেনের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে রয়েছে তিনটি পর্যায়। প্রথম ধাপে বন্দী বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী একটি যুদ্ধ বিরতি হবে। দ্বিতীয় ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে যে পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে, সেখানে পুনর্গঠন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলবে। কিন্তু সমস্যাটা হল অন্য জায়গায়। নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব নিয়ে এখনও পর্যন্ত ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। বহুদিন ধরেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতির দাবি উঠেছে। তার পরেও কিন্তু ইসরায়েল হামাসের হামলার পাল্টা জবাব দিতে গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে বাস্তু হারা হয়েছে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ। খাদ্য, বিশুদ্ধ জল এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে রয়েছে গাজার সকলেই। এছাড়াও অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার জেরে ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।
বাইডেন যখন যুদ্ধ বিরতির উদ্যোগকে ইসরায়েলি প্রচেষ্টা হিসেবে বলার চেষ্টা করছেন, অপরদিকে মাথায় রাখতে হচ্ছে ইসরায়েলের ভঙ্গুর জোট সরকারের কথা। যদি হামাসের হাত থেকে সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি না হয়, তাহলে কিন্তু দেশটার জনগণ নেতানিয়াহুকে ছেড়ে কথা বলবে না। ইসরায়েলের বহু রাজনৈতিক দলই যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে যেতে আগ্রহী নয়। আর ইসরায়েলে তো জোট সরকার। বিরুদ্ধাচরণ করে সরকার ভেঙে গেলে মহাবিপদে পড়বেন নেতানিয়াহু। ইতিমধ্যেই সেই ভাঙ্গন শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশটার কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তাই আপাতত ইসরায়েলকে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবার দেখার আদৌ যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সফল হয় কিনা।