ভারতীয় রেলের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন ডিসেম্বরে ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত – গতি, রুট এবং বৈশিষ্ট্য এখানে দেখুন
ট্রেনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উন্মোচন করতে চলেছে, যা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের দিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজেল বা বিদ্যুৎ ছাড়াই চলা এই হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনটি ভারতীয় রেলওয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা ২০৩০ সালের মধ্যে "নেট জিরো কার্বন নির্গমনকারী" হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আজ এখন ডেস্ক: ভারত প্রথম হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উন্মোচন করতে চলেছে, যা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের দিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজেল বা বিদ্যুৎ ছাড়াই চলা এই হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনটি ভারতীয় রেলওয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা ২০৩০ সালের মধ্যে "নেট জিরো কার্বন নির্গমনকারী" হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিপ্লবী ট্রেনটির রুট, গতি এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার জন্য এখানে সমস্ত তথ্য দেওয়া হল।
এই হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনটি হবে দেশের প্রথম, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মূল সম্পদ হিসেবে জল ব্যবহার করবে। প্রচলিত ডিজেল বা বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের পরিবর্তে, এই উদ্ভাবনী ট্রেন হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি ফুয়েল সেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, যার ফলে শুধুমাত্র বাষ্প এবং জল নির্গত হয় এবং কোন ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসৃত হয় না। এই পরিষ্কার শক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের ট্রেনগুলির জন্য একটি নতুন মান স্থাপন করবে।
এই হাইড্রোজেন ট্রেনটি ভারতীয় রেলওয়ের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ, যা কার্বন নির্গমন কমাতে এবং ডিজেল ইঞ্জিনের কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণ দূর করতে সহায়ক। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ নির্গমন এড়ানো যায়, যা এটিকে পরিবহনের সবচেয়ে টেকসই মাধ্যমগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি, হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম শব্দ করে। ভারতীয় রেলওয়ে গোটা দেশে ৩৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং শান্ত ভ্রমণের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত রুটে এই ট্রেনের ট্রায়াল রান হবে, যা ৯০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। অন্যান্য প্রস্তাবিত রুটগুলির মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে, কালকা-শিমলা রেলওয়ে এবং ভারতের বিভিন্ন মনোরম এবং দূরবর্তী অঞ্চল।
এই ট্রেনটির সর্বাধিক গতি হবে ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা, যা যাত্রীদের জন্য দ্রুত, টেকসই এবং আরামদায়ক ভ্রমণ সরবরাহ করবে। প্রতিটি হাইড্রোজেন ফুয়েল ট্যাঙ্ক প্রায় ১,০০০ কিমি পর্যন্ত চলার ক্ষমতা রাখে, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘ রুটের জন্য উপযুক্ত হবে।
এই ট্রেনে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলগুলির মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাসকে অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ট্রেনের মোটরগুলিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এবং কেবলমাত্র জল এবং বাষ্প নির্গত হয়। প্রতিটি ঘণ্টায় ট্রেনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রায় ৪০,০০০ লিটার জল প্রয়োজন হবে। এই ট্রেনগুলির জন্য জলের সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হবে।
প্রতিটি হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরির খরচ প্রায় ৮০ কোটি টাকা। ট্রেনের পরিচালনা সমর্থনের জন্য হাইড্রোজেন সংরক্ষণাগার এবং রিফুয়েলিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিক পরীক্ষার সফলতা এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল এবং প্লান্ট অনুমোদনের পর, ভারতীয় রেলওয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে আত্মবিশ্বাসী।
প্রাথমিক ট্রায়ালের পর, ভারতীয় রেলওয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইড্রোজেন ট্রেনের পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলবে। এই ট্রেনগুলি প্রচলিত ডিজেল ট্রেনের মতোই গতিশীলতা এবং যাত্রী ক্ষমতা প্রদান করবে, পরিবেশবান্ধব বিকল্প প্রদান করে দক্ষতায় কোন ঘাটতি না রেখে।
ভারতের হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করা টেকসই রেল পরিবহনে একটি পথিকৃৎ পদক্ষেপ। শূন্য নির্গমন, কম শব্দ এবং উচ্চ গতির সুবিধা সহ এই হাইড্রোজেন ট্রেনটি ভারতের রেলভ্রমণের ভবিষ্যৎকে নতুন আকার দেবে।