মহালয়ার দিন কী শুধুই চন্ডীপাঠ ও তর্পণ করা হয়? জানুন দিনটির বিশেষ গুরুত্ব

এক বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান যা দেবী দুর্গার আগমনের সূচনালগ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিশেষ তিথি মূলত পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা নির্দেশ করে। মহালয়া সাধারণত দুর্গাপূজার আগের সপ্তাহে উদযাপিত হয়, যা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

মহালয়ার দিন কী শুধুই চন্ডীপাঠ ও তর্পণ করা হয়? জানুন দিনটির বিশেষ গুরুত্ব

আজ এখন ডেস্ক, 2 অক্টোবর: মহালয়া হিন্দু ধর্মের এক বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান যা দেবী দুর্গার আগমনের সূচনালগ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিশেষ তিথি মূলত পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা নির্দেশ করে। মহালয়া সাধারণত দুর্গাপূজার আগের সপ্তাহে উদযাপিত হয়, যা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই দিনটি দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের বার্তা নিয়ে আসে। তাই এই দিন থেকে আপামর বাঙালি পূজার উৎসবের প্রহরগণনা শুরু করে। মহালয়ার ভোরবেলা রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'চণ্ডীপাঠ' শুনে দিন শুরু করা বাঙালির দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য।

মহালয়ার পটভূমি ও ইতিহাস

মহালয়ার উৎপত্তি মূলত বৈদিক ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। 'মহালয়া' শব্দটি দুটি অংশে বিভক্ত—'মহা' এবং 'আলয়'। 'মহা' শব্দের অর্থ অর্থ বিশাল বা মহান, এবং 'আলয়' শব্দের অর্থ আস্রয় বা আবাস। এর ফলে মহালয়ার অর্থ দাঁড়ায় 'পিতৃপুরুষদের মহান আবাস'। এই দিনে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য ত্রিপিণ্ডি শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করার প্রথা আছে। হিন্দু ধর্মমতে, পিতৃপক্ষের এই শেষ দিনে পূর্বপুরুষদের আত্মার মুক্তি কামনার জন্য তর্পণ করা হয়, যাতে তাঁরা শান্তিতে অবস্থান করতে পারে।

মহালয়ার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

হিন্দু ধর্মমতে, পিতৃপক্ষের সময়ে, পূর্বপুরুষদের আত্মারা পৃথিবীতে আসে এবং তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করা হয়। মহালয়ার দিনে এই আচারপালন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে পালিত হয়। অন্যদিকে, মহালয়া দেবীপক্ষের সূচনা হিসেবে দেবী দুর্গার আগমনের প্রস্তুতিও শুরু হয় এই দিনটি থেকে। মহালয়ার মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন এবং পৃথিবীতে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবেন।

মহালয়ার উদযাপন

মহালয়ার মূল উদযাপন হয় তর্পণ ও চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে। ভোরে গঙ্গার ঘাটে বা কোনো পবিত্র জলাশয়ের কাছে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি রয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্যে জল ও পবিত্র উপাচার নিবেদন করা হয়। তর্পণ করতে না পারলেও ঘরে বসেই পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা যায়। বাঙালি সমাজে মহালয়ার সাথে চণ্ডীপাঠের ঐতিহ্যও যুক্ত রয়েছে। বিখ্যাত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ আজও বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মহালয়ার ভোরে এটি বেতারে সম্প্রচারিত হয়, যা দুর্গাপূজার এক অঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়।

মহালয়া এবং দুর্গাপূজা

মহালয়ার পর দেবীপক্ষ শুরু হয়, যা দুর্গাপূজার আধ্যাত্মিক ভাবনায় আবদ্ধ। মহালয়া দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনীর সূচনা হিসেবে উদযাপিত হয়। বলা হয়, মহালয়ার দিনই দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে প্রার্থনা করে, এবং তাঁদের সম্মিলিত শক্তিতে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়। এই দিন দেবীর মর্ত্যে আসা এবং শত্রুর বিনাশের প্রস্তুতি শুরু হয়, যা দুর্গাপূজার দিনগুলোতে পূর্ণতা পায়। আধুনিক সমাজে মহালয়া শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক গুরুত্বও বহন করে। বাঙালির জীবনে মহালয়ার সাথে দুর্গাপূজার আবেগ, নস্টালজিয়া এবং ঐতিহ্য সবকিছুই মিশে রয়েছে। মহালয়ার দিনটিতে ঘরে ঘরে পূজার কেনাকাটা, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে থাকে এবং পূজার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়। মহালয়া যেন দুর্গাপূজার উৎসবের এক সূচনা ধ্বনি।