রেমালে বাংলাদেশে দুর্যোগে দুর্ভোগ: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
রেমালের তাণ্ডব থেকে ভারত সদ্য মুক্তি পেয়েছে। ভারতের ক্ষতির পরিমাণ অল্প হলেও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ অতটা ভাগ্যবান নয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় তীব্র জলোচ্ছ্বাস ও দমকা হাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মোট ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ১০ জন। রাজধানী ঢাকায় ৪ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলেও সারা দেশে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের এক দিন পরও বাংলাদেশে এর প্রভাব বিদ্যমান। সারা দেশের আকাশ গুমট এবং বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থল নিম্নচাপটি সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হতে পারে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে পরিস্থিতি মনিটর করেছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীরাও পরিদর্শনে যাবেন। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যে আট লক্ষের বেশি উপকূলবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭ ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত ও বিধ্বস্ত হয়েছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, এবং দোকানপাট। বিমানের বহু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে, ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রেমালে বাংলাদেশে দুর্যোগে দুর্ভোগ: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড: দগদগে ক্ষত
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১
১৯ জেলায় ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ
বি এন দত্ত, ঢাকা
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা সময় নিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সেখানেই শেষ নয়, ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও সারা দেশে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থায় গোটা দেশকেই রেমালের কারণে ভুগতে হলেও উপকূলে রেমাল যে দগদগে ক্ষত তৈরি করেছে, তার উপশম শিগগিরই মিলবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। উপকূলীয় এলাকায় দেখা গেছে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। প্রবল জোয়ারে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে, কোথাও জল উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন জেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়ি-ঘর, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক এলাকা। সর্বশেষ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ১০ জন বলে জানানো হয়েছে। রেমালের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে বেশির ভাগ উপকুলীয় এলাকা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের জল ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ ১০ জেলায় অন্তত ২১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রেমালের তাণ্ডবে ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ৩, চট্টগ্রামে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রাজধানী ঢাকাতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই বৃষ্টির মধ্যেই টিনের বেড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে স্পর্শ, বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন, মরিয়ম বেগম (৪৫), লিজা আক্তার (১৫), মো. রাকিব (২৫) ও আলামিন (২২)। সোমবার (২৭ মে) রাতে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডায় ও যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের আলাদা চারটি ঘটনায় তাঁরা প্রাণ হারান।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার এক দিন পরও প্রভাব কাটেনি ঘূর্ণিঝড় রেমালের। ফলে সারা দেশের আকাশ গুমট হয়ে আছে। মঙ্গলবারও ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি ঝরতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। যদিও রাজধানী ঢাকা সহ বেশ কিছু জায়গায় বৃষ্টি থেমেছে। রোদ উঠেছে, জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের জলে তলিয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন। আর এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বন্যপ্রাণীর। বর্তমানে স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। মঙ্গলবার সংস্থাটি বলছে, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। মঙ্গলবার আবহাওয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লিগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লিগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন। আর আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে দলের নেতা-কর্মীরাও যাবেন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল। প্রায় ৭ ঘণ্টাব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি তছনছ হয়ে গিয়েছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, দোকানপাট, বাতিল হয়েছে বিমানের বহু ফ্লাইট।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যে আট লক্ষের বেশি উপকূলবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান। এসব জেলা হল- খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রাম। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। এদিকে রেমালের কেন্দ্রভাগ ঢাকা অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে রাজধানীতে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। সোমবার সকালেও দেখা গিয়েছে প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কলাপাড়া ও রাঙাবালীর বেড়িবাঁধ। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি-দোকানপাট, উপড়ে গিয়েছে গাছপালা। ভেসে গিয়েছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর। রবিবার দুপুরে পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের হাত থেকে ফুপু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে জোয়ারের জলে ভেসে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়। এছাড়া, বাউফলে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে দশ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত ৩৫ হাজারের বেশি। এছাড়া, সদর, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলায় বাঁধ ভেঙে চারশর বেশি পরিবার জলবন্দি। ভেসে গিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মাছের ঘের। সাতক্ষীরায় ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অনেক এলাকা। ঝালকাঠিতে প্লাবিত হয়েছে ৪ উপজেলার ২ শতাধিক গ্রাম। এছাড়া, গাছ উপড়ে রাস্তায় পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পুরো জেলায়। বিদ্যুৎ নেই ভোলাতেও। এদিকে, রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত আলী মোড়ল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান।
খুলনার দাকোপে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। সকাল হওয়ার পর নিজ উদ্যোগ মেরামত শুরু করেন স্থানীয়রা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে খুলনায় গাছের নিচে পড়ে খুলনার বটিয়াঘাটা গাওঘরা গ্রামরে লাল চাঁদ (৩৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিঝুপ দ্বীপ, চরঘাসিয়া, ঢালচরসহ ৩ উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লক্ষীপুরের রামগতি ও কমলনগরের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে জলবন্দি কয়েক হাজার পরিবার। এসময় কুমিল্লায় মো. সাইফুল ইসলাম সাগর নামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়।
এদিকে, লক্ষীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় মজুচৌধুরীহাট ঘাটে আটকে পড়েন কয়েকশ যাত্রী। এসময় ভোলায় ঘরচাপা পড়ে মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া ভোলায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, বরিশালেও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবক মারা গিয়েছেন। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আঘাত করে। এই ঝড়ের প্রভাবে গতকাল থেকে আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও বরিশালে মোট ১২ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রবিবার রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এখন এটি খুলনার কয়রায় অবস্থান করেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশরবুনিয়া গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৬০০ মিটার ভেঙে গিয়েছে। বাঁধটি পায়রা নদীতে বিলীন হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর থেকে জল গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এর ফলে সেখানকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে, কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের জলে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, উত্তর নুনিয়াছটা সহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটতে দেখা যায়। বরিশাল নগরের রূপাতলীর জিয়ানগর, খ্রিস্টানপাড়া, পলাশপুর, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, দক্ষিণ রূপাতলী, ভাটিখানা, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, সদর রোড, কেডিসি সহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে জল উঠলে তাঁরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গিয়েছে জলের নিচে। বাগেরহাটে গাছপালা উপড়ে সঞ্চালন লাইনের উপর পড়েছে। এই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপের সব কটি গ্রাম জলে তলিয়ে গেছে। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের উপরে ২ ফুট উচ্চতায় জল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে অনেকের মাছের খামার ও পুকুরের মাছ।
লেখক বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক