২০৩১ সালেও সরকারে আমরাই থাকব: দীপ্সিতা
কেউ চিরকালীন নয়। পরিবর্তন চেয়ে বামফ্রন্টকে সরিয়ে মানুষ তৃণমূলকে ২০১১ সালে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই বুঝতে পারে কত বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। এরপর ভাবল একটু বিজেপিকে দেখা যাক। বাংলায় ক্ষমতায় না এলেও বিজেপির মাটি শক্ত হয়েছে ২০১৯ লোকসভা থেকে। এখন মানুষ বুঝতে পারছেন, এই দুটো দলই সমান। আবার সময় এসেছে বদলের।
সৌম্য বাগচী ও শক্তিপদ মুখোপাধ্যায় : ‘আমি একজন সামান্য সৈনিক, তারকা নই যে মানুষ আমাকে দেখলেই ছুটে আসবেন, লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছি সাধারণ, মধ্যবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষের হয়ে কথা বলতে। যদি জিততে পারি সংসদে তুলে ধরব বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকদের নিদারুণ দুরবস্থার কথা। তাঁদের পেনশন বন্ধ, পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকা তৃণমূলের নেতারা পকেটস্থ করেছে মালিকদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। খেতে পাচেছ না একসময় রমরম করা শ্রমিক মহল্লার পরিবারগুলো। প্রতিবাদ করতে গেলেই জুটছে শাসানি। শ্রীরামপুরে একসময় প্রচুর কারখানা ছিল। রাজবল হাটের তাঁতশিল্প পাল্লা দিত শান্তিপুর, ফুলিয়ার সঙ্গে। সেসবই আজ অতীত। গুরুত্ব দিলে এখানে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটত। সব ধর্মের উপাসনালয় রয়েছে এখানে। রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। কিন্তু বিগত ১৩ বছরে উন্নয়ন দূরে থাক, আরও খারাপ হযেছে অবস্থা। নিকাশি ব্যবস্থা অসহনীয়, রয়েছে পানীয় জলের তীব্র সমস্যা, কৃষিভিত্তিক এলাকাগুলিপর্যাপ্ত জলের অভাবে ধুঁকছে। রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য। জিটি রোডের মতো ব্যস্ত সড়ক যানজটে নাকাল। এই নিয়ে রাজ্যের শাসক বা প্রধান বিরোধী দলের কোন হুঁশ নেই। ধর্মের আফিংয়ে তাঁরা বুঁদ হয়ে রয়েছেন।’
সকাল থেকে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করে সবে স্নান সেরে একটু বিশ্রাম নিতে বসেছেন, সূর্যদেবের রোষ একটু কমলেই আবার বেরিয়ে পড়তে হবে প্রচারে। মহারণ তো আসন্ন (২০ মে)। প্রচুর মানুষ তাঁকে দেখবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকবেন, একটু শুনবেন তাঁর কথা, তাঁর গলার গান শুনতে পেলে তো কথাই নেই। কিন্তু দীর্ঘ এই দৌড়ঝাঁপের মধ্যে বিশ্রাম তো খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তা আর হচেছ কোথায়! সাংবাদিকরা যে উপস্থিত।
রাজ্যের প্রধান দুই দলের নেতাদের সঙ্গে প্রচারের মধ্যে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে জুটছে গলাধাক্কা, ঔদ্ধত্য। এক নেতা বলছেন, ‘আপনাদের মিডিয়া তো বিজেপির দালাল। অপর দলের নেতা বলছেন, ‘যান তৃণমূলের তাঁবেদারি করুন।’ কিন্তু তিনি দীপ্সিতা ধর, শ্রীরামপুর লোকসভার কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী। সৌজন্যবোধের ক্ষেত্রে তাঁর তুলনা মেলা ভার। প্রথমেই বললেন,‘স্নান করে আসছি, প্লিজ একটু বসুন। এল চা। চা খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ঘরোয়া সাজে উপস্থিত কৃষ্ণকলি। নেই তারকা প্রার্থীদের মতো চড়া মেকআপ। ঠিক যেন পাশের বাড়ির মেয়েটি। আত্মবিশ্বাসী দীপ্সিতা বললেন, ‘এটা আমার কাছে সেমিফাইনাল। ২০২৬-এ হবে ফাইনাল।’
প্রশ্ন করেছিলাম, বামেরা শূন্য, তাহলেও এত আত্মবিশ্বাস কেন। বললেন, ‘কেউ চিরকালীন নয়। পরিবর্তন চেয়ে বামফ্রন্টকে সরিয়ে মানুষ তৃণমূলকে ২০১১ সালে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই বুঝতে পারে কত বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। এরপর ভাবল একটু বিজেপিকে দেখা যাক। বাংলায় ক্ষমতায় না এলেও বিজেপির মাটি শক্ত হয়েছে ২০১৯ লোকসভা থেকে। এখন মানুষ বুঝতে পারছেন, এই দুটো দলই সমান। চাটুকারিতা, চুরি, মিথ্যেকথার ফুলঝুরিতে এরা বাংলা মাত করতে চাইছে। আবার সময় এসেছে বদলের। এবার আবার উড়বে লাল পতাকা। কটা আসনে জিতব, সেটা আমি জানি না। কিন্তু মানুষের প্রবল সাড়া পাচিছ।’
সিপিএমকে নিয়ে অনেকে বলেন, ‘সাদা চুলের নেতাদের জন্যই দলের এই হাল।’ দীপ্সিতার সটান উত্তর, ‘বিমানদারা আমাদের এখনও পথ দেখাচেছন। এই বয়সেও ধুতি পরেü ছুটে বেড়াচেছন। নরেন্দ্র মোদিরও তো বয়েস হয়েছে। তাঁকে নিয়ে তো এই প্রশ্ন ওঠে না।’ শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘২০৩১ সালে কি আমরা বিধানসভায় দীপ্সিতা, মীনাক্ষী, শতরূপ, সৃজন, সায়ন, প্রতিকুরদের লাল বাতিওয়ালা গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেখব!’ প্রত্যয়ী কৃষ্ণকলির মিষ্টি মুখে দেখা গেল আত্মবিশ্বাসের হাসি। তিমির রাত্রি শেষে ‘ভোরের আলো’ দীপ্সিতা ধর, শুধু সূর্যোদয়ের অপেক্ষা।