রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবার বাজারে আসছে রোগমুক্ত চাল!
রোগমুক্ত চাল বাজারে আসছে। এই পরমায়ুশাল চাল উৎপাদনে রাজ্য সরকার এবার গুরুত্ব দিচ্ছে।পুরনো ধানের চাষ আবার ফিরে আসছে । এমনটাই প্রস্তুতিপর্ব সরকারি কৃষি খামারগুলিতে। পুরনো ধান চাষ করে তার চাল বিদেশে রপ্তানি করে বেশি লাভের মুখ দেখতে চাইছে সরকার।
আজ এখন ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার, ১লা অক্টোবর: রোগমুক্ত চাল বাজারে আসছে। এই পরমায়ুশাল চাল উৎপাদনে রাজ্য সরকার এবার গুরুত্ব দিচ্ছে।পুরনো ধানের চাষ আবার ফিরে আসছে । এমনটাই প্রস্তুতিপর্ব সরকারি কৃষি খামারগুলিতে। পুরনো ধান চাষ করে তার চাল বিদেশে রপ্তানি করে বেশি লাভের মুখ দেখতে চাইছে সরকার। সেইসঙ্গে রাজ্যের চাষিরাও ন্যায্য দাম পেয়ে অতিরিক্ত লাভবান হবেন। তাছাড়া পুরনো ধানের চাল ভিটামিন সমৃদ্ধ ও হজমকারী । জ্বালানি খরচ কম হয় । তাড়াতাড়ি লাভ হবার প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে চান কৃষিবিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে রাসায়নিক সার ও ওষুধ ব্যবহার না করে জৈবসারে ওই সমস্ত ধান যাতে চাষ হয়, তারও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, 'রোগমুক্ত চাল' উৎপাদন করার লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় সরকার। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে প্রাচীন বা পুরনো ধান বলতে যা বোঝায় তা হল কালাভাত, বহুরুপী, দুধরাজ, গোবিন্দ ভোগ, সীতাভোগ, দোলেরি, শিউলি মুকুল, ব্ল্যাক স্টিক, কবিরাজ শাল, ওরা, কালানমিয়া, বার্মা ব্ল্যাক, পরমায়ুশাল ইত্যাদি। এখনকার অধিকফলনশীল আমন বা বোরো ধানের চাষে হয়তো ফলন অনেক বেশি পান চাষিরা। দেখা গিয়েছে এই বেশি ফলন পেতে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন চাষিরা। এর ফলে একদিকে যেমন জমির অম্লত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, ধীরে ধীরে জমি বন্ধ্যাও হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে এই সমস্ত ধানের চাল রোগমুক্ত নয়। এই সমস্ত চালের ভাত খেয়ে কঠিন অসুখে ভুগছেন মানুষ এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা বিশেষজ্ঞদের কাছে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তীকালে জমি বন্ধ্যা হলে চাষ বন্ধ হবে। আর রাসায়নিক সার ও ওষুধ প্রয়োগ করা ধানের চালের ভাত খেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগের উপদ্রব। এর হাতে থেকে বাঁচতে গেলে জৈব পদ্ধতিতে পুরনো ধানের চাষকেই জমিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এমনটাই ধারণা কৃষি বিশেষজ্ঞদের। তাই সেই চিন্তাভাবনা থেকে উঠে এসেছে পুরনো ধানের চাষ কীভাবে করা যায়।
কৃষি খামারগুলিতে বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরনো ধান চাষ করে সুফলও পেয়েছেন। রাসায়নিক সার ও ওষুধ ছাড়াও যে জৈবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ধান উৎপাদন সম্ভব এবং তা থেকেও চাষিরা যে উপযুক্ত লাভবান হবেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই রাজ্য সরকারও এ বিষয়ে উদযোগী হয়ে মাঠে নেমেছেন। রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। কৃষি বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রাচীনকালের ধান চাষ করতেই হবে। তা নাহলে পরবর্তী সময়ে চাষ করা নিয়ে মহাসঙ্কটে পড়বেন চাষিরা। তাই এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সমৃদ্ধ ও হজমকারী রোগমুক্ত ধানের চাষ করতে হলে জৈব প্রযুক্তি একমাত্র উপযুক্ত। কীভাবে চাষ করবেন তা প্রতিটি কৃষি ব্লকে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। কালো ও সুগন্ধি ভাতের ধানে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে। যা বেশি পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ।
কৃষিবিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র সোতুয়া বলেন, প্রাচীন কালো ধান অর্থাৎ কালালারি, বামী ব্ল্যাক, কালানমিয়া, ব্ল্যাকস্টিক ইত্যাদি। আবার সুগন্ধি পুরনো চালের ধান হল সীতাভোগ, গোবিন্দভোগ, দুধরাজ, সোলেখি, শিউলিমুকুল, কবিরাজশাল ইত্যাদি। ওই সমস্ত ধানের চালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে । আবার উচ্চগন্ধি জেলায়দুখরাজ, সীতাভোগ, গোবিন্দভোগ, সোলারি, শিউলিমুকুল, ইত্যাদি মেডিসিন পর্যায়ের ধান। যার ভাত সুস্বাদু এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। ব্ল্যাকস্টিক, কালানমিয়া জাতের ধানের চালে ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রচুর ফ্যাট আছে। কালালাহি ধানের চাষের ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে। করেণ এই ধরনের ধানের চালে ভিটামিন বিগ-১, বি-৬, বি-১২ প্রচুর পরিমাণে আছে। এছাড়া ওরা এবং পরমায়ুশালের ভাত হজমশক্তি বাড়ায়, পেটের অসুখ দূর করে। তাছাড়া এমন কিছু ধানের চাল আছে যা থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব।চাষ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে চাষিদের শিয়রে সমূহ বিপদ। জমিতে এক-দু'বছর পর চাষ করা যাবে না। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে জমির হারানো উর্বরতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য দরকার প্রাচীন ধানের চাষ। জৈবসারে চাষ চাষ করলে প্রথম দু-এক বছর ফলন কমবে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে ফলন অনেক বাড়বে, সেইসঙ্গে বাঁচবে জমি। খরচ কমবে, লাভ হবে বেশি। চাষিদের কাছে এখন মরণ-বাঁচনের লড়াই। যেভাবে ফসলে মার খাচ্ছেন, তাতে আগামী এক-দু'বছরের মধ্যেই চাষিরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। মেরুদণ্ডটাই ভেঙে যাবে। তাই আগে থেকে সাবধান হতে হবে চাষিদের। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এবারে আমন জমিতে পাঁচ ধরনের প্রাচীন ধান চাষ করে লাভ পেয়েছেন চাষিরা। উল্লেখ্য, বাজারে এর দাম অনেক বেশি। যেমন ব্ল্যাকস্টিক, কবিরাজশাল, সোলারি, কালানমিয়া ইত্যাদি। বাজারে এর চাহিদা আছে। ভিটামিন সমৃদ্ধ, এই ধরনের চালের ভাত খেয়ে রোগমুক্ত হবার সুযোগ আছে। তবে হ্যাঁ,। জমিতে এধরনের চাষ করতে গেলে জৈবসার যেমন প্রয়োগ করতে হবে। সেইসঙ্গে বর্জন করতে হবে কীটনাশক ওষুধ ও রাসায়নিক সার।