জাল ডোমিসাইল সহ বিহারের দুটো ক্রিমিনাল ধরে শিলিগুড়িতে গ্রেপ্তার বাংলা পক্ষর সদস্য রজত ভট্টাচার্য ও গিরিধারী রায় !
SSC-GD র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আধাসেনায় নিয়োগে ডোমিসাইল জাল করে বাংলার কোটায় বিহার, উত্তরপ্রদেশের অধিবাসীদের সুযোগ পাওয়ার অভিযোগ আগেই করেছে বাংলা পক্ষ। এইরকম দুই বহিরাগত ক্রিমিনালদের ধরতে গিয়েই বাংলা পক্ষর দুই সদস্য রজত ভট্টাচার্য ও গিরিধারী রায় শিলিগুড়ি পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন গত ২৬ সেপ্টেম্বর।
আজ এখন ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার,২৯ সেপ্টেম্বর:SSC-GD র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আধাসেনায় নিয়োগে ডোমিসাইল জাল করে বাংলার কোটায় বিহার, উত্তরপ্রদেশের অধিবাসীদের সুযোগ পাওয়ার অভিযোগ আগেই করেছে বাংলা পক্ষ। এইরকম দুই বহিরাগত ক্রিমিনালদের ধরতে গিয়েই বাংলা পক্ষর দুই সদস্য রজত ভট্টাচার্য ও গিরিধারী রায় শিলিগুড়ি পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন গত ২৬ সেপ্টেম্বর। জাল ডোমিসাইলের দুর্নীতি ফাঁস করতে ও ধৃতদের মুক্তির দাবিতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করল বাংলা পক্ষ। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়, সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি, শীর্ষ পরিষদ সদস্য সম্রাট কর, সৌম্যকান্তি ঘোড়ই, অরিন্দম চ্যাটার্জী, এমডি সাহিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাল ডোমিসাইল বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা করা বিষ্ণু চৌধুরী।
গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন,
"তাঁরা ব্যক্তিস্বার্থে এই কাজ করছিলেন না, করছিলেন ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে। বাংলার ভূমিপুত্রদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আধাসেনায় নিয়োগ পরীক্ষা হল SSC-GD. এই চাকরির পরীক্ষায় প্রতিটা রাজ্যের রাজ্য ভিত্তিক আসন আছে। যেগুলো সেই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত। বাংলার জন্য সংরক্ষিত আসনে বিহার-ইউপি- ঝাড়খন্ড সহ অন্যান্য রাজ্যের ছেলেমেয়েরা (যারা বাংলার স্থায়ী বাসিন্দা নয়) টাকার মাধ্যমে বাংলার ডোমিসাইল সার্টিফিকেট বানিয়ে বা সরাসরি ডোমিসাইল জাল করে চাকরি দখল করছে। ডকুমেন্ট জালিয়াতি তো আইনত অপরাধ৷ এরা BSF, CRPF, SSB, CISF এ চাকরি পাচ্ছে। ক্রিমিনালে ভরে যাচ্ছে আধাসেনা। "
কৌশিক মাইতি তথ্য সহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিপদের দিকটা তুলে ধরেন। তিনি বলেন "এছাড়াও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। ধরুন বিহারে কারোর ক্রিমিনাল (রেপ বা খুনের কেস) কেস আছে। সে তো বিহার থেকে পুলিস ভেরিফিকেশন পাশ করবে না। তাই বাংলার জাল ডোমিসাইল নিয়ে চলে আসছে। এখানে টাকার মাধ্যমে পুলিস ভেরিফিকেশন পাশ করে যাচ্ছে। খুনী বা ধর্ষক কেন্দ্রীয় আধাসেনায় বছরের পর বছর চাকরি পাচ্ছে এভাবে৷এরা কি নিরাপত্তা দেবে? "
কৌশিক জানান- বাংলার স্থায়ী বাসিন্দারা কেন্দ্রীয় আধাসেনার চাকরিতে কিভাবে বঞ্চিত হচ্ছ। SSC-GD 2021 এ নিয়োগে বাংলার রাজ্য কোটায় সংরক্ষিত আসন ছিল প্রায় ৩০০০, এর মধ্যে ১৮০০+ চাকরি বাইরের রাজ্যের লোকজন কাগজ জাল করে চাকরি পেয়েছে। SSC-GD -2022 এ বাংলার জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল ৬০০০+, ওর মধ্যে ৩৬২৭ জন বাইরের রাজ্য থেকে এসে ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে পেয়েছে। ভাবুন। ৬০% ফেক। আমাদের বাংলার ছেলেমেয়েদের হকের চাকরি দখল হয়ে যাচ্ছে। তারা কোথায় যাবে? এই চাকরিতে বয়সের উর্ধ্বসীমা খুব কম।
গর্গ চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভের সাথে বলেন "কোন দল এটা নিয়ে লড়াই করে না। বিজেপি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কথা বলে। কিন্তু বিজেপির শাসনাধীন মানে স্পষ্ট ভাবে বললে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানেই এই সেনা ও আধাসেনার চাকরিতে নিয়োগে দুর্নীতি চলছে বছরের পর বছর৷ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। কোনো মিডিয়া এই নিয়ে খবর করেনা সেভাবে। রাজ্য পুলিস বাংলা পক্ষর আন্দোলনের আগে কিছু করেনি। SDO অফিসের ক্লার্ক রাও যুক্ত, টাকা দিয়ে কাজ হয়। হাজার হাজার জাল সার্টিফিকেট বেরিয়েছে।
বাংলা পক্ষ SSC র পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর, CRPF র আঞ্চলিক সদরদপ্তর, একাধিক SDO অফিস, ডায়মণ্ড হারাবার পুলিস সুপারের অফিসে ডেপুটেশন দিয়েছে, হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে, প্রায় ৫০ টি FIR করেছে। চাকরিপ্রার্থীদের পাশে নিয়ে বাংলা পক্ষ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।"
বাংলা পক্ষর আন্দোলনের ফলে আধাসেনা কর্তৃপক্ষ SSC-GD -2021 & 2022 এর জন্য প্রায় ৫৫০০ চাকরি বাতিলের সুপারিশ করেছে এবং চাকরি বাতিল হয়েছে। নোটিফিকেশন আছে। ভাবুন ৬০% জাল করে চাকরি পেয়েছে। দুবছরেই সংখ্যা ৫৫০০, তাহলে গত এক দশকে কত ক্রিমিনাল আধাসেনায় এভাবে চাকরি পেয়েছে?
বাংলা পক্ষর আন্দোলনের ফলে SDO অফিস গুলো থেকে হাজার হাজার ডোমিসাইল বাতিল হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার স্বার্থে, বর্ডার সুরক্ষার স্বার্থে এবং বাংলার স্থায়ী বাসিন্দাদের চাকরির স্বার্থে দুজন ক্রিমিনাল যারা জাল কাগজ নিয়ে আধাসেনার চাকরি দখল করতে এসেছিল তাদের ধরেছে। এটা ভারতের সুরক্ষার জন্য এবং বাংলার ছেলে-মেয়েদের জন্য মহৎ কাজ৷
কেন রজত ভট্টাচার্যদের যেতে হল? এত মামলা করা হল, CBI তদন্ত চলছে, এত ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে- তার পরেও জালিয়াতি হচ্ছে কিভাবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বা রাজ্য পুলিস ব্যবস্থা না নিলে বাংলার ছেলেমেয়েরা কোথায় যাবে? তাই বাংলার স্থানীয় ছেলেমেয়েদের অনুরোধেই গেছিল রজত ভট্টাচার্য ও গিরিধারী রায়। তারা ক্রিমিনাল না। বাংলা তথা ভারত মায়ের গর্বের সন্তান।
আসাম ও ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় তাই মিডিয়া চুপ। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় নেই, তাই এখানে এই মহৎ কাজকে খারাপ ভাবে দেখাচ্ছে। বাঙালি বিরোধী বিজেপির চাপেই বাংলায় রজত ও গিরিধারী গ্রেপ্তার হয়, বিজেপি বাংলা পক্ষর কাজের বিরোধিতা করে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বাংলা পক্ষ স্পষ্ট দাবি জানায়-
১. রজত ভট্টাচার্য ও গিরিধারী রায়কে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
২. জাল ডোমিসাইল মাধ্যমে আধাসেনায় কোনো চাকরি দেওয়া চলবে না।
৩. জাল ডোমিসাইল ও জাল কাস্ট সার্টিফিকেট দিয়ে গত ১০ বছরে যারা চাকরি পেয়েছে তাদের ভেরিফিকেশন ও তদন্ত করে চাকরি বাতিল করে গ্রেপ্তার করতে হবে৷
৪. আধাসেনায় চাকরিতে ফিজিক্যাল টেস্ট ও মেডিক্যাল টেস্টের ক্যাম্প গুলোর বাইরে রাজ্য পুলিস ক্যাম্প করে আগে কাগজ পত্র চেক করুক।