প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন ঠাকুরবাড়ি আজ প্রায় ধ্বংসের পথে
আজও বিদ্যমান সেই ৫০০ বছরের সুপ্রাচীন ঠাকুরবাড়ি, সেখানে আজও নিত্য পূজিত হয়ে চলেছেন রঘুনাথ জিউ। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে তা আজ ধ্বংসের পথে।
শুভ চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার অন্তর্গত কুসুমদা ১ নম্বর অঞ্চলের অধীনস্থ আস্তি গ্রাম, যেখানে আজও বিদ্যমান সেই ৫০০ বছরের সুপ্রাচীন ঠাকুরবাড়ি, সেখানে আজও নিত্য পূজিত হয়ে চলেছেন রঘুনাথ জিউ। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে তা আজ ধ্বংসের পথে।
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে এক ভিক্ষুক বৈষ্ণব ভিক্ষা করতে করতে আস্তি গ্রামের ওই লাটা বনের গভীর জঙ্গলে পথভ্রষ্ট হন। তারপরেই তিনি ওই লাটাবনের কিছু অংশ পরিষ্কার করে তার আরাধ্য রঘুনাথজিউকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন ওই জঙ্গলে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম হিসাবে আস্তি বেলার বলরামপুর বড়াই কাঁটা চৌকি সহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে দিন যাপন করতেন। পরবর্তীতে তিনি তার এক শিষ্যকে শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর সেবা কার্যের দায়িত্ব দিয়ে দেহত্যাগ করেন। শিষ্যেরও ঠিক একইভাবে ভিক্ষা করে দিন চলতে থাকে, সেই সঙ্গে ঠাকুর বাড়ির নাম লোকমুখে শোনা যেতে থাকে।
তখন ছিল নবাবী আমলের শাসন ব্যবস্থা। তখন সেই নবাবী সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৮৪ বিঘা কয়েক কাঠা চাষ জমিন ওই ঠাকুরবাড়ির নামে দান করেন। পরবর্তীতে আরেকজন গুরু-শিষ্য ওই ঠাকুরবাড়ির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, শুরু করেন চাষাবাদ। প্রধানত ধান চাষ হত, গরুর লাঙল দিয়ে ধান চাষ করতে হতো, পরবর্তীতে চাষের ধান ভাল মূল্যে বিক্রি হতে শুরু করে। সেই জমানো টাকা থেকে একটু একটু করে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি ঠাকুর বাড়ির নামে ক্রয় করেন বিভিন্ন এলাকায়, শুরু হয় জমিদারি আমল, প্রতিবছর ধুমধাম করে পূজার্চনা নাম সংকীর্তন ও রাসলীলা, বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন এই ঠাকুরবাড়িতে প্রভুর দর্শনে। আজও বিদ্যমান ভগ্নাবশেষ রাস মন্দির। আস্তে আস্তে চারিধারে বিস্তারিত হয় ঠাকুরবাড়ির নাম।
পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ধ্বংস হয়ে যায় বেশ কিছু জল জমি, অবশিষ্ট এখন প্রায় আট বিঘা জল জমি, আর ঠাকুরবাড়ি রয়েছে প্রায় ১০-১৫ বিঘা জায়গা জুড়ে। আজও নিত্য পূজিত হয় রঘুনাথ জিউ। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে আজ যেন সেই ঠাকুরবাড়ি ধ্বংসের পথে। এখন ওই ঠাকুরবাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বিষ্ণুপদ দাস অধিকারী বলেন, ‘বহু মানুষকে বলেছি, বহু আশ্রমে গিয়েছি। কোনওভাবেই কেউ এই ঠাকুরবাড়ির দায়িত্ব নিতে নারাজ, যদিও কেউ দায়িত্ব নিতে চায় সে তার স্বার্থের লোভে। এই ঠাকুরবাড়ির সেবা করতে গেলে সেবক হিসাবে থাকতে হবে, বিবাহ করা যাবে না, শুধুমাত্র ঠাকুরের সেবায় তাঁর জীবন সমর্পণ করতে হবে। এই কথা শুনলেই সকলেই পালিয়ে যায়। তাই আমার অবর্তমানে এই ঠাকুরবাড়ি কীভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
তিনি একথাও জানিয়েছেন, যদি কোনও এনজিও এগিয়ে এসে এই মন্দিরটির সংস্কার করে তাহলে হয়তো এই প্রাচীন ঐতিহ্য ঠাকুরবাড়ি হয়তো বা টিকে থাকবে। এখন ওই ঠাকুরবাড়িতে কোনোভাবে নিত্যপূজা হয়। বড় করে আর কোনও পুজো হয় না, যিনি পুজো করেন ও ভোগ রান্না করেন, তিনি প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকা করে নেন। সেবক বিষ্ণুপদ দাস অধিকারী বলেন, ‘এইটুকু তো জমা টাকা রয়েছে। এর মধ্যে পূজারী নিয়ে নেন প্রতি বছর ৭২ হাজার টাকা। এই জমির টাকাতে আর চলছে না এই ঠাকুরবাড়ি। কিভাবে সংস্কার করবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’