স্ট্রোক শুধু ব্রেন বা হার্টে নয়, চোখেও হতে পারে
চোখের স্ট্রোক ইঙ্গিত দেয়, আপনার আরও কোনও বড় স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাদের এই ধারণার কারণ কী? আসলে চোখের রেটিনার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে মস্তিষ্কের। তাই রেটিনার মধ্যে হঠাৎ করে যদি রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ।
ডানকুনির দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউটের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ তনুশ্রী চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘আজ এখন’-এর প্রতিনিধি মোহন গঙ্গোপাধ্যায়।
চোখ হল আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দৃষ্টিশক্তি ছাড়া আপনি প্রায় অচল। তাই, সকল অঙ্গের মতো চোখেরও যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। না হলে, হতে পারে স্ট্রোকের মতো বড় বিপদ। উল্লেখ্য, শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ও অক্সিজেন বহনকারী নালীগুলি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখনই ঘটে এই বিপদ। কেড়ে নিতে পারে সারা জীবনের জন্য চোখের দৃষ্টি।
চোখের গুরুত্ব কতখানি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে আপনার চোখেও স্ট্রোক হতে পারে। কেন জানেন? চোখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল রেটিনা। আমরা যা কিছু দেখি সব এই রেটিনার মাধ্যমেই। যখন এই রেটিনার শিরাগুলি ব্লক হয়ে যায়, তখনই হয়ে থাকে চোখে স্ট্রোক। অনেকে মনে করেন স্ট্রোক শুধু ব্রেন বা হার্টে হয়। কিন্তু এই ধারণা কি আদৌ ঠিক? একেবারেই না।
চোখের স্ট্রোক বলতে কী বুঝি ?
চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্রেন বা হার্ট স্ট্রোকের মতোই চোখের স্ট্রোকও সমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। চোখের স্ট্রোক ইঙ্গিত দেয়, আপনার আরও কোনও বড় স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাদের এই ধারণার কারণ কী? আসলে চোখের রেটিনার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে মস্তিষ্কের। তাই রেটিনার মধ্যে হঠাৎ করে যদি রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। এই অবস্থায়, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে চোখের শিরার ক্ষতি ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো বিপদের ঝুঁকি কমতে পারে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোক হয় একটি মাত্র চোখে। তবে, সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে না পারলে দু’চোখেরই দৃষ্টি হারিয়ে যেতে পারে।
কেন হয় চোখে স্ট্রোক ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের চোখে আছে অসংখ্য রক্তবাহীনালী। এই সকল রক্তনালীগুলিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ না হলে সেগুলিতে দেখা দেয় ব্লকেজ। আর তখনই ঘটে যায় স্ট্রোকের মতো ঘটনা। ঝাপসা দেখা থেকে শুরু করে একেবারেই চলে যেতে পারে আপনার দেখার ক্ষমতা। অনেকে এটা অবহেলা করেন। যত দিন যাবে, চোখের অবস্থা তত খারাপ হবে। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কাদের হতে পারে এই সমস্যা ?
মনে রাখতে হবে চোখের েস্ট্রাক মানেই ঝুঁকিপূর্ণ। যাঁদের বয়স ৫০-এর বেশি, তাঁদের সাধারণত চোখের স্ট্রোক বেশি দেখা যায়। এছাড়া মনে রাখতে হবে, যাঁদের আছে উচ্চরক্তচাপের মতো সমস্যা এবং ডায়াবিটিস, এমন মানুষদের মধ্যে চোখের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চোখে স্ট্রোকের উপসর্গ
চোখে স্ট্রোক হওয়ার আগে থেকেই কয়েকটি ইঙ্গিতেই আপনি বুঝতে পারবেন। যেমন উপসর্গগুলোর মধ্যে প্রথমত, ফ্লোটার সমস্যা ।
মনে হবে আপনার দেখার সময় চোখের সামনে কিছু একটা ভাসছে। এগুলিই হল ফ্লোটার কণা। যখন চোখে রক্ত বা অন্য কোনও তরল বের হয়, তখনই এমন হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, চোখে আপনি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা, ব্যথা অনুভব করবেন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখে স্ট্রোক হলে যন্ত্রণা অনুভূত হয় না। তৃতীয়ত, চোখে ঝাপসা দৃষ্টি আসতে পারে। আপনার নামে মনে হবে, সব কিছু যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এক চোখে আপনি আর আগের মতো দেখতে পাচ্ছেন না। প্রধানত এই সমস্ত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে ।
চিকিৎসা পদ্ধতি
বিশেজ্ঞরা মনে করেন, চোখের স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেকটাই নির্ভর করে স্ট্রোকে চোখের কতটা ক্ষতি হয়েছে তার উপর। এর জন্য অবশ্যই কিছু থেরাপি রয়েছে। চোখের ওপর- নিচে ম্যাসাজ করা। এছাড়া লেজার পদ্ধতিতে থেরাপি এবং ক্লট-বাস্টিং ওষুধ প্রয়োগ ।
উল্লেখিত, টিপস এবং পরামর্শগুলি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে। যে কোনও ওষুধ বা ফিটনেস প্রোগ্রাম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যাঁদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না , তাঁদের চোখের রেটিনার রক্তনালিগুলোর একটি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তখন রোগী বুঝতে পারেন, হঠাৎ করে তাঁর চোখের দৃষ্টি অনেকখানি কমে গিয়েছে। হয়তো তিনি গতকাল চোখে ভাল দেখেছেন, কিন্তু চোখে রক্তক্ষরণের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
করণীয়
চোখে রক্তক্ষরণ হলে প্রাথমিকভাবে রোগীর ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কালার ফানডাস ফটোগ্রাফি। এটা হচ্ছে মূলত চোখের ছবি তোলা। এর মাধ্যমে বোঝা যায় চোখে ঠিক রক্তক্ষরণ কতটুকু হয়েছে। এরপর দেখা হয় রক্তক্ষরণ কতটুকু মাত্রা পর্যন্ত হয়েছে। রক্তক্ষরণের মাত্রা দেখে রোগীকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এই ইনজেকশন দেওয়া হলে রোগীর চোখে জমাটবদ্ধ রক্ত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। আক্রান্ত চোখের দৃষ্টি ভাল হয়ে যাওয়ার পর তিন থেকে ছয় মাস পর রোগীর সেই চোখে একটি এনজিওগ্রাম করা হয়। এর মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করা হয় রোগীর চোখের রক্তক্ষরণের উৎসটি কোথায়? যদি পরীক্ষায় চোখে কোনও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পাওয়া যায়, তাহলে লেজার চিকিৎসার আশ্রয় নিতে হয়। তবে অনেক সময় ইনজেকশনের মাধ্যমেই রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এমনটাও দেখা যায় যে রোগীর আক্রান্ত চোখের পুরোটাই রক্ত দিয়ে ভরে যায়। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ইনজেকশনে পুরোপুরি কাজ করবে না। ফলে চোখে সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সাবধানতা
তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না চাইলে রোগীদের নিজেদের রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এতে করে এ ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে না।