বীরভূম জেলা পরিষদের অধীন সব জলাশয় লিজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
বীরভূম: গত চার বছর ধরে বারো ভূতে খেত জেলা পরিষদের বেশ কিছু পুকুরের মাছ। এবার ভূত তাড়াতে মাঠে নামল জেলা পরিষদ। বীরভূম জেলা পরিষদের অধীনে থাকা দিঘি, পুকুর, পুষ্করিণী সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ নির্দেশ দিলেন। সিউড়ি-১ ব্লকের লম্বোদরপুরে একটি দিঘি খতিয়ে দেখেন অধিকিরিকরা। সভাধিপতি জানান, "সব পুকুরের লিজ হবে। মেছো ভূত তাড়াতে আগামী সপ্তাহেই পুকুরের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। লুটেপুটে খাওয়া সব বন্ধ।" জেলা পরিষদের অধীনে বিভিন্ন ব্লকে সরকারি পুকুর আছে। এখনও পর্যন্ত তার মধ্যে ৪১টি পুকুর, দিঘির হদিশ পেয়েছে জেলা পরিষদ। সেগুলির বাস্তবিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন সভাধিপতি। উদ্ধার হওয়া তালিকায় সিউড়ি-১ ব্লকের লম্বোদরপুরে ২৪ একর ৪৪ শতকের উপর দিঘি আছে। যেখানে সরকারি প্রকল্পে মাছের চারা তৈরি থেকে মাছ চাষ হত। কিন্তু মাছের সেই টাকা কোথায় যেত, কে খেত, তার কোনও হিসাব জেলা পরিষদের কাছে ছিল না। এমনকী তাদের নিজস্ব তহবিলে সে টাকা ঢুকত না।
একই ব্লকের চোরমুড়তে ৯ একর ১২ শতক জলা জমিতে মাছ চাষ হত। এছাড়াও লাভপুরে তিনটি, সিউড়ি-১ ব্লকে মোট চারটি, বোলপুরে আটটি, ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকে চারটি, ইলামবাজারে পাঁচটি, মুরারইয়ে আটটি, দুবরাজপুরে দুটি, সিউড়ি-২ ব্লকে তিনটি, এছাড়াও ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকে, নলহাটি-১ ও ২ ব্লকে একটি করে পুকুর আছে। সব পুকুর গত ২০২০ সালের পর থেকে জেলা পরিষদের আর কোনও টাকা ঢোকেনি। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৎস্য দপ্তরকে ওই পুকুরগুলি থেকে সঠিকভাবে মৎস্য চাষ করে জেলা পরিষদকে টাকা দিতে বলা হয়েছিল। জেলায় যে জলসম্পদ কমিটি তথা ওয়াটার বডি আছে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতি বছর পুকুরের মাছ বাবদ জেলা পরিষদকে ২ লাখ ৫৭ হাজার
৫০০ টাকা করে তাদের নিজস্ব খাতে জমা দিতে হবে। যা দিয়ে জেলা পরিষদের নিজস্ব উন্নয়ন হবে। কিন্তু জেলা পরিষদের হিসাবের খাতা বলছে, সে টাকা কোনও খাতে জমা পড়েনি। বিদায়ী জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরি জানান, তাঁর আমলে ২০২০ সাল থেকে সব পুকুর মৎস্য দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র সিউড়ির কাছে রাজারপুকুরের টেন্ডার ডেকে লিজ দেওয়া হয়েছিল জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। যদিও মৎস্য দপ্তরের জেলা আধিকারিক সুমন্ত দে জানান, "মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের পুকুর লিজে অথবা চাষ করতে আমাদের দপ্তর নেয়নি।"
বর্তমান জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ জানান, 'আমি আমার দপ্তরের আধিকারিকদের সশরীর পুকুর দিঘির অবস্থান দেখে রিপোর্ট চেয়েছি। মাছ চাষের জন্য দ্রুত টেন্ডার করা হবে। তারপরে মাছের টাকা কোথায় গেল তার হদিশ করা হবে।"
জলবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলাশয় লিজে দেওয়ার সিদ্ধান্তের আগে এর সুবিধা ও অসুবিধা ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে জলসম্পদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।