শান্তিনিকেতনে কণিকাদেবীর ব্যবহৃত সামগ্রী: একটি প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পীর ঐতিহ্যের সংরক্ষণ

শান্তিনিকেতনে কণিকাদেবীর ব্যবহৃত সামগ্রী: একটি প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পীর ঐতিহ্যের সংরক্ষণ
 সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়: কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শতবর্ষ উদযাপনের মাঝেই উদ্বোধন বিশেষ সংগ্রহশালার। তাঁর শান্তিনিকেতনের বাসভবন আনন্দধারা যা বর্তমানে মোহর বিথীকা অঙ্গন নামেই পরিচিত। সংগ্রহশালার সূচনা করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, কল্পিকা মুখোপাধ্যায়, বীথিকা মুখোপাধ্যায়, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রিয়ম মুখোপাধ্যায়, ঋতুপা ভট্টাচার্য ও সৈকত সিংহ রায় শান্তিনিকেতনের শিল্পী এবং পরিজনেরা। শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সারা বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাঁরই অন্যতম সংযোজন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকে জনমানসের কাছে তুলে ধরতেই স্মৃতি অভিলেখাগার ও সংগ্রহশালার উদ্বোধন। ২০২৩ এর ১২ অক্টোবর তাঁর ৯৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ বছরের ১২ অক্টোবর তাঁর শততম জন্মদিন।
আনন্দধারার বাড়ির কক্ষে সহৃদয় মানুষের প্রচেষ্টাই গড়ে উঠেছে কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রহশালা। বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় এবং ঋতপা ভট্টাচার্য। দুইজনেই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী। কণিকার কনিষ্ঠা ভগিনী বীথিকা মুখোপাধ্যায়ের পুত্র এবং পুত্রবধূ। তবে সংগ্রহশালাটি প্রত্যহ সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শুধুমাত্র মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।
সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত সামগ্রী, সংগীতের আনুষঙ্গ যন্ত্র ও তৎসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এই সংগ্রহশালায় কণিকাদেবীর ব্যবহৃত বীণা, তবলা, নোটবুক, চিঠি, ছবি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রয়েছে। এই সবকিছু মিলে কণিকাদেবীর জীবন ও সংগীতের একটি সম্পূর্ণ চিত্র উপস্থাপন করে।
বীণা: কণিকাদেবীর ব্যবহৃত বীণাটি ছিল তার সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এই বীণাটিতেই তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান রচনা করেছিলেন।
নোটবুক: কণিকাদেবীর নোটবুকগুলিতে তাঁর হাতের লেখা গানের কথা, সুর এবং অন্যান্য নোট রয়েছে। এই নোটবুকগুলি বাঙালি সংগীতের ইতিহাসের একটি অমূল্য সম্পদ।
চিঠি: কণিকাদেবীর চিঠিগুলি তার ব্যক্তিগত জীবন এবং সংগীত জীবনের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ করে। এই চিঠিগুলি তার পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের একটি জানালা খুলে দেয়।
ছবি: কণিকাদেবীর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবিগুলি এই সংগ্রহশালাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
 এই বাড়িতেই পা পড়েছে বহু গুণীজনের। লতা মঙ্গেশকর, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, আমজাদ আলি খাঁ সহ সংগীতের প্রথিতযশাদের। এছাড়াও চলচ্চিত্র,
সাহিত্য, চিত্রকলা, ক্রিয়া সহ সমাজের গুণীজনদের। চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, "এই বাড়িটি সকলের কাছে আবেগের এবং অনুভূতির। বোলপুর পুরসভা শান্তিনিকেতনে তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তাটি নির্মাণ করবেন এবং নামকরণ করবেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সরণি।" কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় জানান, "তাঁর ব্যবহৃত শাড়ি, বটুয়া, পানের বাটা, চশমা ছড়াও ব্যবহৃত আসবাবপত্র, সংগীত সাধনার যন্ত্র, বিশিষ্টজনদের চিঠিপত্র, তাঁর ব্যবহৃত গানের খাতা সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে।"
শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সম্পাদক সৈকত সিংহ রায় জানান, "শান্তিনিকেতনের আশ্রম ইতিহাসেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি। গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং জিনিসপত্রও রাখা রয়েছে সংগ্রহশালায়। পরবর্তীতে অডিও মিউসিক্যাল ইউনিট করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সংগ্রহে থাকা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্যদের আর্কাইভ দেখার সুযোগ মিলবে সকলের।"
কণিকাদেবীর সংগ্রহশালা শুধুমাত্র একটি সংগ্রহশালা নয়, এটি একটি প্রেরণা। এটি আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে কলা ও সংস্কৃতি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।