বীরভূমের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত চিকিৎসক গ্রেফতার
শনিবার নির্যাতিত নার্সের অভিযোগে জানা যায়, চিকিৎসক চয়ন মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে উত্ত্যক্ত করছিলেন এবং ঘনঘন নিজের ভাড়া বাসায় ডেকে পাঠাচ্ছিলেন। নির্যাতিতা নার্স জানান, গত সপ্তাহে চিকিৎসক তাঁকে বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এবং হুমকি দেয়।এর পরেই তিনি মুরারই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ মণ্ডলকে বিষয়টি জানালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
আজ এখন ডেস্ক, 6 অক্টোবর: বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমার মুরারই ব্লকের চাতরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক নার্সকে ধর্ষণের অভিযোগে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত চয়ন মুখোপাধ্যায়, একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, যিনি মুরারই এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এবং কর্মরত নার্সদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শনিবার নির্যাতিত নার্সের অভিযোগে জানা যায়, চিকিৎসক চয়ন মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে উত্ত্যক্ত করছিলেন এবং ঘনঘন নিজের ভাড়া বাসায় ডেকে পাঠাচ্ছিলেন। নির্যাতিতা নার্স জানান, গত সপ্তাহে চিকিৎসক তাঁকে বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এবং হুমকি দেয়।এর পরেই তিনি মুরারই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ মণ্ডলকে বিষয়টি জানালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে এবং ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। চয়ন মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের একটি দল কোলাঘাটে গিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেফতার করে। তাঁকে সোমবার আদালতে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঘটনার প্রথমদিকে বিষয়টি চেপে রাখার চেষ্টা হলেও, নার্সদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্রুত তা ভাইরাল হয়ে যায়। কলকাতা থেকে এই খবর জানাজানি হওয়ার পর মুরারই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত নার্সরা নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সরব হন। তারা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের সহকর্মী নার্সদের প্রতি এই ধরনের আচরণে ভবিষ্যতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। নার্সদের এই উদ্বেগকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযুক্ত চিকিৎসক চয়ন মুখোপাধ্যায় ২০২১ সালে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে চাতরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। কোলাঘাটের বাসিন্দা এই চিকিৎসককে স্থানীয়ভাবে একজন দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অন্যদিকে, নির্যাতিতা নার্স ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত সাত বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। তবে কীভাবে এই সম্পর্ক এমন অপ্রীতিকর পরিণতির দিকে গড়াল তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
এলাকাবাসী কয়েকজন বলেন, এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, চিকিৎসক ও নার্সের মধ্যে দীর্ঘদিনের পরিচিতি ও সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের পরই সঠিক সত্য উদঘাটন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চিকিৎসক চয়ন মুখোপাধ্যায় গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর মতে, এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। যদিও পুলিশ এই দাবি খতিয়ে দেখছে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মুরারই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ মণ্ডল বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতিতা নার্স ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে'কে সঙ্গে নিয়ে রামপুরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ শিকদার এবং মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের সমন্বয়ে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন এবং নির্যাতিতার সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেন।
এই ঘটনা আবারও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত নার্সদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইতিপূর্বে, আর জি কর হাসপাতালেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে, নার্সরা আরও নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য দাবি তুলেছেন।
নার্সদের এই যৌক্তিক দাবি এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রশাসনের আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র কর্মীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে আঘাত করে না, বরং সমগ্র স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি দ্রুত আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং যথাযথ বিচারের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।