মহাসপ্তমীর আগেই তোপধ্বনির সঙ্গে শুরু হয় বিষ্ণুপুর রাজবাড়ীর শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপূজা

ঢাকে পড়েছে কাঠি। আর ভোরের হিমেল বাতাস জানান দিচ্ছে, পুজো আসছে। অনেকের কাছে পুজো মানে শহুরে মণ্ডপ ও থিমের ছড়াছড়ি, তবে অনেকেই পুজোর মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য খোঁজেন।

মহাসপ্তমীর আগেই তোপধ্বনির সঙ্গে শুরু হয় বিষ্ণুপুর রাজবাড়ীর শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপূজা

আজ এখন ডেস্ক,দেবপ্রসাদ মুখার্জী, ১লা অক্টোবর: বিষ্ণুপুরে ঢাকে পড়েছে কাঠি। আর ভোরের হিমেল বাতাস জানান দিচ্ছে, পুজো আসছে। অনেকের কাছে পুজো মানে শহুরে মণ্ডপ ও থিমের ছড়াছড়ি, তবে অনেকেই পুজোর মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য খোঁজেন। আপনিও এমন ব্যতিক্রমী হলে চলুন ঘুরে আসি বাঁকুড়ার প্রাচীনতম পুজোর মণ্ডপ থেকে। ইতিহাসের শহর বিষ্ণুপুরে কামানের গর্জনে পুজোর ১৫ দিন আগেই শুরু হয় দুর্গাপূজা। জিতিয়া অষ্টমী থেকে এই প্রাচীন নগরীতে মুহুর্মুহু গর্জে ওঠে কামান। আর প্রতিটি কামানের গর্জনের সঙ্গে মন্দিরে পা রাখেন মল্ল রাজ পরিবারের কূলদেবী মা মৃন্ময়ীর একেক স্বরূপ। 

জিতিয়া অষ্টমীর দিন শরতের সকালে ঢোল আর সানাইয়ের মিলিত নহবতের শব্দে মল্ল কূলদেবী মৃন্ময়ীর মন্দিরে পা রাখেন বড় ঠাকরুন অর্থাৎ মহাকালী। ১০২৬ বছরের প্রাচীন রীতি মেনে এই দিন অর্থাৎ, মহাসপ্তমীর দশ দিন আগেই বিষ্ণুপুরের মল্ল কূলদেবীর মন্দিরে মহা সমারোহে শুরু হয়ে দুর্গাপুজা। এই দিনেই কামানের গর্জন মল্লভূম জুড়ে ঘোষণা করে আগমনীর এক ব্যতিক্রমী বার্তা। 

রাজ্যের প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজ কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। জানা যায় একসময় মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুর ব্লকের প্রদ্যুম্নগড়ে। ৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দের কোনো একসময় তৎকালীন মল্ল রাজা জগৎমল্ল শিকারে বেরিয়ে পৌঁছে যান তৎকালীন ঘন জঙ্গলে ঢাকা বিষ্ণুপুরে। একটি বট গাছের ছায়ায় ক্লান্ত ও অবসন্ন জগৎমল্ল ঘুমিয়ে পড়েন। এই সময় বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকান্ডের সাক্ষী হন তিনি। কথিত আছে এই সময়েই দেবী মৃন্ময়ী রাজার সামনে আবির্ভূত হয়ে বট গাছের পাশে দেবী মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরের নির্দেশও দেন দেবী। সেই নির্দেশ মোতাবেক রাজা জগৎমল্ল জঙ্গল কেটে বিষ্ণুপুরের সেই স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন মৃন্ময়ীর সুদৃশ্য বিশাল মন্দির। রাজ কূলদেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত মৃন্ময়ীর মন্দিরে শুরু হয় দুর্গাপুজা। প্রথমে কয়েকবছর ঘটেপটে পুজা হলেও পরে গঙ্গামাটি দিয়ে দেবীমুর্তি তৈরী করে মন্দিরে শুরু হয় পুজো। রাজার পুজো। স্বাভাবিক ভাবেই সেই পুজোয় ছাপ পড়ে রাজ আভিজাত্যের। একসময় মল্ল রাজারা শাক্ত থাকায় দেবীর পুজো হত তন্ত্র মতে। হত নরবলিও।

তবর সেসব এখন ইতিহাস। ষোড়শ শতকে রাজা বীর হাম্বির শ্রীনিবাস আচার্যর সান্নিধ্যে এসে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহন করে বৈষ্ণব ধর্মকে মল্ল রাজত্বে রাজ ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই নরবলি বন্ধ হয়ে সঙ্গীতের অষ্টরাগে দেবী আরাধনা শুরু হয়।

এই পুজোর জাঁকজমকে খামতি হলেও আজও কৃষ্ণা নবমী সহ বিশেষ কয়েকটি তিথিতে শহরের প্রান্তে অবস্থিত মুর্ছা পাহাড় থেকে তোপধ্বনির শব্দে বোধনের আগেই উদযাপনে মেতে ওঠেন আপামর মল্লভূমবাসী।