বীরভূমে বন্ধ সমর্থক আর পুলিশের মধ্যে ধস্তা-ধস্তি
সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়: ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশি বর্বতার অভিযোগ তুলে বুধবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ডাকল বিজেপি।
সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে ধর্মঘট। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে বনধ সফল করতে আবেদন জানিয়েছেন সুকান্তবাবু।
রামপুরহাট রেল স্টেশনে অবরোধ। ট্রেনের সামনে বিজেপির পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বন্ধ সমর্থকেরা।
বুধবার বীরভূমের রাস্তায় নেমেছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি দ্রুব সাহা বলেন, আজ “বুধবার জেলার নানা এলাকায় মিছিল হবে। বন্ধ সফল করতে মিছিল থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।” তারা এদিন রামপুরহাট রেল স্টেশনে সকাল সাতটার থেকে তাদের এই বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে। দেখা যায় বিজেপির বেশ কিছু কর্মী সমর্থক এদিন তাদের দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে, রেল লাইনে ট্রেন - এর সামনে দাঁড়িয়ে। এই বিষয় লক্ষ্য করেই তড়িঘড়ি রামপুরহাট থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনারস্থলে পৌঁছে, বিক্ষোভকারীদের ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের সঙ্গেই একপ্রকার ধস্তাধস্তি লেগে যায় সঙ্গে মৃদু লাঠি চার্চ করে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা উপর।
এদিন বিজেপির কর্মী সমর্থক দাবি করে, আর জি করের বিচার চাইতে তাদের কর্মী সমর্থকরা কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ দেখালে, পুলিশ তাদের ওপর অন্যায় ভাবে বর্বরচিত হামলা চালিয়েছে, যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না, বলেই দাবি তাদের।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ও বিজেপি কর্মীদের অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এই দাবি তুলে তারা ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ করে, অবিলম্বে আর জি করার বিচার চায়, ও বিজেপির ওপর অন্যায় অত্যাচার বন্ধ করার দাবি তুলে প্রতিবাদের সরব হয়। এ মুহূর্তে এখনো পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডের লাগোয়া এলাকায় বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা তাদের আন্দোলনে অনড় রয়েছেন।
দেখা গেছে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী সমর্থক এদিন বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় জড় হয়েছে, তারা এদিন দাবি করে যে বন্ধের রাজনীতি তারা চায় না, তারা চায় সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চলুক জনজীবন। বুধবার এই বিষয়কে নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলকে একে অপরের বিপরীতে চোখে চোখ রাঙাতে দেখা গেল।
দলীয় কর্মীরাও রাস্তায় নেমে বন্ধের বিরোধিতা করবেন বলে জানিয়েছে রামপুরহাট বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আশিষ বাবু বলেন, বিজেপির ধর্মঘটকে পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসাবে দেখছে তৃণমূল। “আর জি করের ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ আমরাও জানিয়েছি। আমরাও চাই, জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাক। কিন্তু এ দিন যে ভাবে ছাত্র সমাজের নামে বিজেপি অশান্তি তৈরি করেছে, তা মানুষ দেখেছে। তার পরে তারা বনধ ডেকেছে।” তাঁর সংযোজন, “রাজ্যের মানুষ এখন আর বন্ধ চান না। তা ছাড়া, এখন চাষের মরসুম চলছে। একটি কাজের দিন যাতে নষ্ট না করা হয়, তার অনুরোধ আমরা জেলাবাসীর কাছে রাখছি।”
“ছাত্রদের আন্দোলনকে সামনে রেখে বিজেপি যে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, নবান্ন অভিযানেই তা টের পেয়েছেন মানুষ। তাই কেউ বন্ধকে সমর্থন করবেন না।”
প্রসঙ্গত , শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে কেন পুলিশ লাঠি চালাল? কেন কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল? এমনকী মহিলা, বয়স্করাও ছাড় পায়নি। কোথাও পুলিশ লাঠি চালানোর আগে কেউ পাথর ছোড়েনি। কেমিক্যাল মেশানো জল স্প্রে করা হয়েছে এরকম অভিযোগও আমরা ছাত্রদের কাছ থেকে পাচ্ছি। এটা কী ধরণের আচরণ? বেকার যুবক – যুবতীরা কি বাংলায় জন্ম নিয়ে কোনও ভুল করেছেন? যে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতায় থাকতে এত দমন পীড়ন করতে হয় তার আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। বাংলার মানুষকে জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। বাংলার গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সুরক্ষা সমস্ত কিছু বিপন্ন।’
এর পর বনধের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামিকাল বিজেপির ডাকে ১২ ঘণ্টার সাধারণ বনধের ডাক দিচ্ছি। শুধু বিজেপি কর্মীরা নন, সাধারণ মানুষের কাছে আমার আবেদন। ভেবে দেখুন, আজ আপনার পাশের বাড়ির ছেলের ওপর লাঠি চার্জ হয়েছে, কাল আপনার ছেলের ওপর হতে পারে। আজ পাশের বাড়ির ছেলের চাকরি বিক্রি করে দিয়েছে তৃণমূল নেতারা, কাল আপনার ছেলে চাকরি বিক্রি হবে। আজ আরজি করের বোনটি যেমন অত্যাচারিত হয়েছে কাল আপনার বাড়ির মেয়ের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই বনধকে সর্বাত্মক করুন। এটা স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী সরকারের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করার বনধ।’