এক হাতে খড়্গ, অন্য হাতে বাঁশি! বাংলার এই গ্রামে অদ্ভুত রূপে পুজো নেন কালী, জানুন ইতিহাস
নদিয়ার হোগলবেরিয়ায় স্বপ্নে পাওয়া কৃষ্ণকালী মাতার মন্দির, এক অলৌকিক ঐতিহ্যের প্রতীক। জেলার সেনপাড়া গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি বছরভর ভক্তদের নিত্য সেবায় মুখর থাকে, তবে দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপুজোর সময় এখানে আয়োজন করা হয় বিশেষ পূজার।
আজ এখন ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার,27 অক্টোবর: নদিয়ার হোগলবেরিয়ায় স্বপ্নে পাওয়া কৃষ্ণকালী মাতার মন্দির, এক অলৌকিক ঐতিহ্যের প্রতীক। জেলার সেনপাড়া গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি বছরভর ভক্তদের নিত্য সেবায় মুখর থাকে, তবে দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপুজোর সময় এখানে আয়োজন করা হয় বিশেষ পূজার।
এই পূজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এখানে প্রথমে শ্রীকৃষ্ণের এবং পরে মা কালীর পূজা করা হয়। এক অনন্য দেবী-দেবতার যুগল মূর্তি হিসেবে পরিচিত কৃষ্ণকালী মাতার মূর্তি, যা প্রাচীন হিন্দু সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিরল এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এই মূর্তিতে মা কালীর এক হাতে খড়গ, অন্য হাতে পদ্ম এবং দুই হাতে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি, যা মাতৃশক্তি ও প্রেমের মূর্তির এক অসাধারণ মিলনকে প্রকাশ করে।
২০১৪ সালে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, এলাকার বাসিন্দা জয়দেব মন্ডল এক স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর। তার স্বপ্নের অভিজ্ঞতায় অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামবাসী ও ভক্তদের দানে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই মন্দির নদিয়ার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। মন্দিরের বর্ষীয়ান পুরোহিত শম্ভু মৌলিক জানাচ্ছেন, নদিয়া জেলার শ্রীচৈতন্য ধামে দু-একটি স্থানে কৃষ্ণকালী মাতার পূজা হলেও এমন মন্দির আর কোথাও নেই।
মূর্তিটির জন্মকথাও ইতিহাসে প্রোথিত। পুরাণ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী শ্রীরাধার প্রতি আয়ান ঘোষের মা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, কারণ রাধা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। এই সন্দেহ যখন এক চরম অবস্থায় পৌঁছায়, তখন কৃষ্ণ এবং মা কালী তার সামনে একত্রে উপস্থিত হন। রাধা কোথাও ছিল না; তার পরিবর্তে এই যুগল মূর্তিই ছিল, যা শাশ্বত প্রেম ও শক্তির সংমিশ্রণকে প্রকাশ করে।
সেনপাড়ার কৃষ্ণকালী মন্দির তাই শুধু পূজা স্থান নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। এই মন্দিরে প্রতিদিন ভক্তরা দেবীর কৃপা ও আশীর্বাদ লাভের জন্য আসেন, এবং কালীপুজোর দিনে এখানে বিশেষভাবে ভক্তদের সমাগম ঘটে।