আগে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তারপর চাষ , বাঁচবে খরচ

চাষিদের কাছে এখন অনেক জমিই বহুফসলী। একটা জমির উপর বছরে একাধিক ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে জমিতে রাসায়নিক সারের বহুল পরিমাণ ব্যবহার, সেই সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগ মাটির নিজস্ব উর্বরশক্তিকে হারাচ্ছে। জৈব সারের ব্যবহার কম হওয়ায় জমির অম্লত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তারপর চাষ , বাঁচবে খরচ

আজ এখন ডেস্ক, সাবানা পারভিন,৪ অক্টোবর: চাষিদের কাছে এখন অনেক জমিই বহুফসলী। একটা জমির উপর বছরে একাধিক ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে জমিতে রাসায়নিক সারের বহুল পরিমাণ ব্যবহার, সেই সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগ মাটির নিজস্ব উর্বরশক্তিকে হারাচ্ছে। জৈব সারের ব্যবহার কম হওয়ায় জমির অম্লত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ চাষিরা খবরই রাখেন না মাটির স্বাস্থ্যের ব্যাপারে। তাই যতদিন যাচ্ছে মাটির নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে বন্ধ্যা হচ্ছে।

 একটা সময় আসবে চাষিরা যদি সচেতন না হন তাহলে মাটি পুরোপুরি বন্ধ্যা হয়ে পড়বে। ফসল উৎপাদন হবে না। তাই এখন থেকে বিশেষজ্ঞরা চাষিদের সচেতন করছেন। আগে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে তবেই সেই জমিতে ফসল কী হবে তার নির্ধারণ করতে হবে। ।প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যেভাবে রাজ্যের উর্বর জমিতে একাধিক ফসলের চাষ হচ্ছে, সারা বছর ধরে একই জমিতে বারবার চাষের ফলে বিশ্রাম পাচ্ছে না মাটি। উল্টে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ পর্যাপ্ত ব্যবহার হচ্ছে। মাটি পরীক্ষা করে কতটা সার লাগবে সেটা আগে ঠিক করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, অধিক লাভের পথ দেখতে গিয়ে বেশি মাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার, জৈবসার ব্যবহার না করা, সমূহ বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে ।

 লক্ষ্যণীয়, বছরের পর বছর জমিতে ফসফরাস, নাইট্রোজেন পটাশিয়াম রাসায়নিক সার ও ওষুধ প্রয়োগে মাটি তার নিজস্ব ক্ষমতা হারাচ্ছে। বেশি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহারে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা কমছে। মাটিতে সার ব্যবহারের ফলে জমিতে অন্য খাদ্যকেও অগ্রহণযোগ্য করে তুলছে, এছাড়া মাটি পরীক্ষা করে মাটির স্বাস্থ্য জানার পর সারের ব্যবহার করলে কেবল যে অর্থের সাশ্রয় হবে তা নয়, মাটিকে রক্ষা করা যাবে। উল্লেখ্য, মাটি পরীক্ষার জন্য কীভাবে জমি থেকে তা সংগ্রহ হবে তার কয়েকটি পদ্ধতি জেনে রাখা দরকার চাষিদের। তাদের মনে রাখতে হবে ১৭টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে মাত্র তিনটি খাদ্য উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে পায়। তা হলো কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। বাকি জরুরি খাদ্যগুলি হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এছাড়া অনুখাদ্য হিসেবে লোহা, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, তামা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও ফসলের জীবনচক্রে উদ্ভিদের যে সব খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়, তার মলিবডেনাম, নিকেল ইত্যাদি ব্যবহার হয়। এ সমস্ত প্রয়োগের আগে মাটিতে কোনটি প্রয়োজন তা পরীক্ষা করে আগে জেনে নেওয়া ভালো।

মাটি পরীক্ষার আগে কীভাবে জমি থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে তার কয়েকটি পদ্ধতি জেনে রাখা দরকার চাষিদের। প্রথমত, এক বিঘা জমির ১০ থেকে ১২টা জায়গা ঠিক করে সেখান থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জমি আল থেকে কম করে দু'হাত ছেড়ে মাটি নেওয়ার জায়গা ঠিক করতে হবে। তৃতীয়ত, জমিতে ফসল থাকলে সেই জমির মাটির নমুনা সংগ্রহ না করাই ভালো। জরুরি প্রয়োজনে সংগ্রহ করতে হলে ফসলের দুই সারির মাঝখান থেকে মাটির নমুনা নিতে হবে। চতুর্থত, জমি অবস্থান যদি নিচু বা ঢালু হয় 'তাহলে নিচের দিকে দু'হাত ছেড়ে এবং উঁচুর দিক থেকেও দু'হাত ছেড়ে মাটির নমুনা নিতে হবে। পঞ্চমত, জমিতে যদি ছোট বা বড়ো গাছ থাকে তাহলে সেই গাছের ছায়া থেকে কোনওভাবেই মাটি নেওয়া যাবে না। ষষ্ঠত, সদ্য ব্যবহৃত জৈব বা অজৈব সার যে জমিতে দেওয়া হয়েছে সেখানকার মাটি সংগ্ৰহ করতে হবে। উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে কার্বন, অক্সিজেন ও বাকি জরুরি খাদ্যগুলি ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি নেয়। আর একটা জিনিস খেয়াল রাখত হবে যে কৃষকের নাম, ঠিকানা, কোন ফসল ছিল, কী ফসল চাষ করবেন ইত্যাদি সাদা কাগজে বিস্তারিত লিখতে হবে। এছাড়া মাটি সংগ্রহ করার জন্য কোদাল, খুরপি, বালতি, পুরনো খবরের কাগজ ইত্যাদি রাখতে হবে। আর যেটা করতে হবে তা হল মাটি সংগ্রহের সময় জমির কয়েকটি জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। আগাছা ঢাকা থাকলে কোদাল দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কোদাল দিয়ে ৬ থেকে ৯ ইঞ্চি গভীর করে মাটি নিতে হবে। সব মাটির ওজন কমবেশি ২ কেজি ওজনের হলে ভালো হয়। কিন্তু পরীক্ষাগারের জন্য ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম মাটি লাগবে। যদি মাটি বেশি ভিজে বা আদ্রতা থাকে তাহলে খবরের কাগজের উপরে রেখে তা শুকিয়ে নিতে হবে। ভালো করে শুকানোর পর গুঁড়ো করতে হবে। সেই সঙ্গে আগাছার শিকড়, ঘাস, পাথর বাছাই করতে হবে। এরপর হাত দিয়ে যোগ চিহ্নের মতো ভাগ করতে হবে, কোণাকুণি যে কোনো ভাগ থেকে বিপরীত ভাগের মাটি বাদ দিতে হবে। এভাবে ৩ থেকে ৪ বার ভাগ করলে ৩০০ গ্রামের মতো পরিমাণ হবে, এটা পরীক্ষার জন্য দরকার। তারপর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করতে হবে। তবেই লাভবান হবেন চাষিরা।