স্কুল পোশাক তৈরিতে ঋণে জর্জরিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা
আজ এখন: ২০২২ সালে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল পোশাক তৈরি করে এখনও পর্যন্ত পোশাক সেলাইয়ের টাকা না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন ফরাক্কার এক ব্যক্তি। পোশাক সেলাইয়ের টাকা না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর ছাড়াও মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক সহ একাধিক পদাধিকারীকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে স্কুল পোশাক হিসেবে সরকারি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের হাফ অথবা ফুল জামা এবং হাফ অথবা ফুল প্যান্ট দেওয়া হয়। মেয়েদেরকে দেওয়া হয় স্কার্ট-জামা অথবা চুড়িদার, ওড়না ও প্যান্ট। প্রত্যেকটি স্কুল ইউনিফর্মে থাকে বিশ্ব বাংলার লোগো।
আবিয়ান এন্টারপ্রাইজ' নামে ফরাক্কার একটি সংস্থার কর্ণধার শাহানাজ চৌধুরী বলেন, '২০২২ সালে ফরাক্কা ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত-বেওয়া-১, বেওয়া-২, বাহাদুরপুর, মহেশপুর এবং মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২৮ টি স্কুলের প্রায় ২৯ হাজার ৮৩৯ জন ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক সেলাই করার বরাত ফরাক্কা ব্লকের বিডিও-র নির্দেশে পাঁচটি সঙ্ঘের তরফ থেকে আমার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। স্কুল পোশাক তৈরির লিখিত অর্ডার পাওয়ার পর আমার সংস্থার ২০ জন কারিগর প্রায় ৬ মাস ফরাক্কা ব্লকের 'পথের সাথী' বাড়িতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার পোশাক তৈরি করে সঙ্ঘগুলোর হাতে তুলে দিয়েছিল।'
শাহানাজ জানান, 'প্রত্যেকটি পোশাক সেলাই করার জন্য সরকারের তরফ থেকে ২৫৪ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার পোশাক সেলাই করার জন্য সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্য প্রায় ৭৫.৭৯ লক্ষ টাকা। ২০২২ শিক্ষাবর্ষ পার হয়ে আরও দুটো শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে চললেও এখনও আমরা প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা পাইনি। আমাদেরকে মাত্র ২৭.১৭ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'স্কুল পোশাক তৈরি করার জন্য কারিগরদেরকে তাদের মজুরি ইতিমধ্যেই দিয়ে দিতে হয়েছে। এই টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে বহু ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেনা করতে হয়েছে। এই মুহূর্তে আমি ঋণে সম্পূর্ণ জর্জরিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কাছে এই মুহূর্তে আর অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। পোশাক সেলাই করার টাকা পাওয়ার জন্য একাধিকবার আমি ফরাক্কার বিডিও সহ অন্য আধিকারিকদের সাথে দেখা করেছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাইনি। কোনও উপায় না পেয়ে আমি বিডিও, জেলাশাসক ,মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করার পাশাপাশি হাইকোর্টের উকিলের চিঠি বিডিওকে পাঠিয়েছি।'
যদিও স্কুল পোশাক তৈরি করার জন্য কোনও এজেন্সি বা সংস্থাকে বিডিও অফিসের তরফ থেকে বরাত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে দিয়েছেন ফরাক্কার বিডিও জুনায়েদ আহমেদ। তিনি বলেন, '২০২২ সালের স্কুল পোশাক তৈরির জন্য সমস্ত সঙ্ঘগুলোকে তাদের প্রাপ্য অর্থ দেওয়া হয়ে গেছে। সঙ্ঘগুলো কাকে বরাত দিয়ে সেই পোশাক তৈরি করেছিল সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।'
যদিও ফারাক্কা ব্লকের একাধিক সঙ্ঘের কর্ণধাররা দাবি করেছেন বিডিও অফিস থেকে পোশাক সেলাই করার অর্থ অনুমোদন হওয়ার পর ইতিমধ্যেই তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। ফরাক্কার 'সমন্বয় সঙ্ঘে'র কর্ণধার মাশেদা খাতুন বলেন, 'ওই সংস্থাকে আমাদের তরফ থেকে পোশাক তৈরির জন্য সম্পূর্ণ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন উনি কেন অভিযোগ করছেন আমার জানা নেই।' একই কথা বলেছেন 'প্রগতি সঙ্ঘে'র কর্ণধার কাকলি চৌধুরী। তার দাবি, 'ওই সংস্থাকে ইতিমধ্যেই তাদের প্রাপ্য সম্পূর্ণ টাকা দেওয়া হয়েছে।'
মালদা (দক্ষিণ) লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির জেলা সহসভাপতি মিলন ঘোষ, 'এটি একটি নতুন ধরনের দুর্নীতি। জেলা প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে সরকারি ভবনে বসে কেউ ৬ মাস ধরে স্কুল পোশাক তৈরি করতে পারে না। বিডিও, সঙ্ঘ এবং এজেন্সি-র মধ্যে কী চুক্তি ছিল তা তদন্ত হওয়া দরকার।'
ফরাক্কা (উত্তর) ব্লক কংগ্রেস সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, 'পোশাক তৈরির টাকা তো সরকার দিয়েছিল কিন্তু ওই সংস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুল পোশাক তৈরি করে তা পায়নি। এর পিছনে বড় আর্থিক দুর্নীতি থাকতে পারে। কংগ্রেস প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং দরকারে বড় আন্দোলনে নামবে।'