দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, মহিষাসুর বধে চোখের জলে ভাসে অধিবাসীদের!

চারদিকে যখন অসুরদলনী দেবী দুর্গার বন্দনায় মুখর গোটা বাংলা, তখন অসুর বন্দনায় মেতে উঠেছে আদিবাসী সমাজ! আদিবাসী সমাজে অবশ্য মহিষাশুর হল তাঁদের রাজা হুদুড় দুর্গা। তাই হুদুড় দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকজ্ঞাপন করে আজও প্রথা মেনে হয় দাঁশাই নাচ।

দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, মহিষাসুর বধে চোখের জলে ভাসে অধিবাসীদের!

আজ এখন ডেস্ক,৪অক্টোবর : চারদিকে যখন অসুরদলনী দেবী দুর্গার বন্দনায় মুখর গোটা বাংলা, তখন অসুর বন্দনায় মেতে উঠেছে আদিবাসী সমাজ! আদিবাসী সমাজে অবশ্য মহিষাশুর হল তাঁদের রাজা হুদুড় দুর্গা। তাই হুদুড় দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোকজ্ঞাপন করে আজও প্রথা মেনে হয় দাঁশাই নাচ। বুধবার, দুর্গাষষ্ঠীর দিনে বীরভূম জেলার রামপুরহাট, সিউড়ি , বোলপুর , নলহাটি এলাকায় থেকে শুরু করে দাঁশাই নাচ। 'হুদুড় দুর্গা' র শোকে মগ্ন থাকে বীরভূম জেলার বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। রাঢ়বঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় পুজোর কদিন স্মরণ করা হয় হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুরকে। সপ্তমীর সকাল থেকে দশমী পর্যন্ত হুদুড় দুর্গার সামনে চলে 'দাঁসাই', 'ভুয়াং' নাচ। সাঁওতালি লোকসাহিত্য অনুযায়ী, 'হুদুর' কথার অর্থ প্রচণ্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস কিংবা ঝড়।

আদিবাসী সংস্কৃতির অন্যতম দাঁশাই নাচ ও হুদুড় দুর্গা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সরকার ও শাসকদল বিশেষ তৎপর হয়েছে। রবিন সোরেন বলেন, 'পশ্চিমী সভ্যতার জেরে ধীরে-ধীরে আদিবাসী সমাজেও ঢুকে পড়েছে DJ, আধুনিক সংস্কৃতি। ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী সমাজের নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি। সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আদিবাসীদের অনাদিকাল ধরে চলে আসা এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই দাঁশাই নাচের।

 গোটা জেলা জুড়ে এই দাঁশাই নাচের টিম ঘুরবে।'

উল্লেখ্য, আদিবাসী সমাজ বিশ্বাস করে, আর্য ও অনার্যদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধের পর নিখোঁজ হয়ে যান অনার্য জাতির রাজা হুদুড় দুর্গা। তাই দুর্গাপুজোর এই চারদিন ধরে দাঁশাই নাচের মধ্যে দিয়ে খুঁজে বেড়ানো হয় সেই রাজাকে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, এখনও বেঁচে আছেন, কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন হুদুড় দুর্গা। আর তাঁকে খুঁজে পেতেই পুরুষেরা মহিলার বেশে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে তাঁদের প্রিয় রাজা হুদুড় দুর্গাকে খুঁজে বেড়ান। আর দাঁশাই নাচের মধ্য দিয়েই হুদুড় দুর্গার প্রতি শোকজ্ঞাপন করেন তাঁরা। এই নাচের সঙ্গে প্রতিটি গানের শুরুতেই ‘হায়রে হায়রে’ বলে শোকজ্ঞাপন করা হয়। বলা যায়, সাঁওতাল ও কুর্মি সম্প্রদায়ের দাঁশাই নাচ জঙ্গলমহলে প্রতিটি মণ্ডপে সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ।

অনেকেই মনে করেন, হুদুড় দুর্গা হল সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর উপাস্য দেবতা এবং তাঁকেই হিন্দুধর্মে মহিষাসুর হিসাবে দেখানো হয়েছে। একসময়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের দেবী দুর্গার মুখ দেখাও নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে অবশ্য সেই বিধি-নিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়েছে। এদিন রামপুরহাট বারোমেসিয়া গ্রামের মোড়ল বলেন, 'আদিবাসীরা কেউই দুর্গার পুজো করেন না। করতে পারেনও না। তাঁরা দুর্গা নয়, মহিষাসুরকেই তাঁদের দেবতা হিসাবে দেখেন।' তাই কেউ-কেউ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মত দুর্গাপুজোয় জড়িত হলেও তাঁরা মনে-প্রাণে জড়ান না বলেও দাবি আদিবাসী মোড়লের।